স্টাফ রিপোর্টার : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদ এর বিরুদ্ধে অনিয়ম, অর্থ-আত্মসাত, দুর্নীতি, অসদাচারণ, একক আধিপত্য বিস্তার, সেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপ-ব্যবহার এবং উগ্র পেশী শক্তির অভিযোগ উঠেছে।
এমন অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে প্রায় বছর ধরে একটি সক্রিয় সংগঠনের অফিস কক্ষে ঝুলছে তালা। কার্যক্রমে এসেছে স্তবিরতা, দিনদিন সাংগঠনিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতে করে শিক্ষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। যেকোন সময় সংগঠনটির সাধারণ সদস্য, নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিতে পারে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা। তাই সংগঠনটির শান্তি প্রিয় সদস্য ও নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জোর দৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে সংক্ষুব্ধ ও ভুক্তভোগী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের পক্ষে মোঃ নূরুল আমিন ও সাজিদুল ইসলামসহ ৯৭ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি অভিযোগ গত ২৬/০৬/২০২৪ জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরণ করে সরেজমিনে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
অভিযোগ ও তথ্যসূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর কটিয়াদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সহকারি শিক্ষক নিয়াজ মোহাম্মদ সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার অনাকাক্সিক্ষত আবেগ যেন তাকে মনুষ্যত্বহীন আচরণে তাড়িত করে তোলে। প্রাপ্তির জায়গাটা অনাকাক্সিক্ষত স্বপ্নের দুয়ার খোলার মত আকাশ চুম্বীর মত অবস্থা, যেন ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে কাকে কি বলবেন তা যেন অমূলক হয়ে উঠেছে।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদ এর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র বর্হিভুত এক আধিপত্য বিস্তার ও পেশী শক্তি প্রদর্শন, যখন-তখন খেয়াল খুশি মতো শিক্ষক নেতা ও সাধারণ শিক্ষকদের হেয় প্রতিপন্ন করে ইজ্জত সম্মানে আঘাত করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। শিক্ষা অফিস, শিক্ষক সমিতিতে কোন শিক্ষক ব্যক্তিগত কোন কাজে গেলে, তাকে কেন জানানো হয়নি এজন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে সম্পাদকের তিরষ্কার হজম করতে হয়। এভাবেই শিক্ষক সমিতি, শিক্ষার পরিবেশকে কলুষিত করার চরম অভিযোগ রয়েছে সম্পাদক নিয়াজের বিরুদ্ধে।
এদিকে প্রায় এক বছর যাবত শিক্ষক সমিতির অফিসটি তালাবদ্ধভাবে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সমিতির অফিসে সম্পাদকের একক আদিপত্যের কারণে, সেখানে কোন শিক্ষক নেতা ও সাধারণ সদস্যরা প্রবেশ করতে পারছেনা। সমিতির তিনটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া ছিল, সাধারণ সম্পাদকের কুরুচিপূর্ণ আচরণের কারণে কক্ষগুলো খালি পড়ে আছে, যা সমিতি অর্থনৈতিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ৫২ হাজার টাকা বরাদ্ধ দিয়েছিলেন, তার কোন হদিস মিলছেনা আজও। উক্ত বরাদ্ধের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করায় সম্পাদক দম্ভোক্তির সাথে বলে উঠে ‘আমি সম্পাদক, আমার যা ইচ্ছা তাই করব’। তার কাছে অবসর প্রাপ্ত শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকরাও অসহায় বলে তথ্যে উঠে এসেছে।
সমিতির ৫টি দোকান রয়েছে। দোকানের ভাড়া উঠিয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে। গঠনতন্ত্র মতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে। গঠনতন্ত্র মতে বা সমিতির রেজুলেশন অনুযায়ী সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ১৫০০ (পনের) শত টাকার বেশী হাতে রাখার বিধান নেই। সকল লেনদেন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে হওয়ার কথা থাকলে ও তা অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক মানছে না। সমিতির আয়-ব্যায়ের হিসাব, শিক্ষা সফরের চাঁদার টাকার হিসাব দিতে নারাজ সম্পাদক নিয়াজ। বরং নেতৃত্বকে পুঞ্জিভূত করে শিক্ষা অফিসে, সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন।
সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে নামমাত্র স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে নিজেই ঠিকাদারী কাজে নিয়োজিত রয়েছেন, যা সরকারি বিধি অনুযায়ী অপরাধ। অর্থ-আত্মসাত, কর্মে ফাঁকি, দুর্নীতি, অনিয়ম, সরকারি বিধি অমান্যের ঘটনাসহ অসংখ্য অভিযোগের পাহাড় রয়েছে সম্পাদক নিয়াজের বিরুদ্ধে।
মাত্রাতিরক্ত বাচালতা সমস্যাকে আরো বেশী ঘনিভ‚ত পর্যায়ে নিয়েছে বলে অনেক শিক্ষক নেতারা মনে করেন।
জেলা শিক্ষা অফিসারকে দেওয়া অভিযোগটির অনুলিপি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর, বিভাগীয় উপ-পরিচালক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কটিয়াদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর অনুলিপি প্রেরণ করেছেন অভিযোগকারী শিক্ষক নেতারা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদের সাথে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি একবার ফোন ধরে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন ছেড়ে দেন, এজন্য অভিযুক্ত সম্পাদকের কথা উক্ত নিউজে উল্লেখ করতে পারিনি। এদিকে দুর্নীতিবাজ ও অর্থ-আত্মসাতকারি সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও সমিতি, শিক্ষক, শিক্ষা অফিস ও ইউআরসিকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপের দৃষ্টি কামনা করেছে শিক্ষক নেতারা।