ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে ভুয়া ভোটার তালিকা প্রনয়ণের অভিযোগ উঠেছে শ্রীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে। ভোটার তালিকা সংশোধন চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন কমিটির অভিভাবক প্রতিনিধিরা। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা। তিন র্কাযদিবসের ভিতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দেয়া হয়।
অভিযোগে জানা যায়, আগামী ১৬ মে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে বর্তমান সভাপতি এড. আবুল বাসারকে পুনরায় ক্ষামতার চেয়ারে রাখার কুটকৌশলে লিপ্ত হয়ে খোদ প্রধান শিক্ষক নিজে নিয়ম বহিঃর্ভূতভাবে ভুয়া ভোটার তালিকা প্রনয়ণ করে প্রকাশ করে নীল নকশার নির্বাচন করার পায়তারায় করছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্কুলের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছেন। প্রধান শিক্ষকের পছন্দের প্যানেলকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে মনগড়াভাবে একই পরিবারের একাধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি দেখিয়ে অভিভাবকদের ভোটার করার অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়াও অন্য বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষার্থীকে ওই বিদ্যালয়ে নিয়ম বহিঃর্ভূত ভর্তি দেখিয়ে ভোটার করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে এলাকা ২টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি এড. আবুল বাশার এবং অন্যটির নেতৃত্বে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী ফুল মিয়া। এ নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় উভয় পক্ষের সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে, যে কোন মূহূর্তে সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।
এ বিষয়ে অভিভাবক প্রতিনিধিরা জানান, নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তারা। মনোনয়ন সংগ্রহের পর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রদান করেছে। ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোট চাইতে গিয়ে দেখেন একই অভিভাবকের একাধিক ভোট রয়েছে। আবার একই পরিবারের একাধিক ছাত্র থাকায় বাবা ও মায়ের নামে আলাদা ভোট রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি একই বাড়ীর একই পরিবারের হওয়ায় পরস্পর যোগসাজশে নির্বাচনকে তাদের পক্ষে নেয়ার জন্য এমন অসৎ কাজটি করেছে। সুষ্ঠ ভোট গ্রহণের জন্য ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছন বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ভোটার তালিকা দেখে বুঝতে পারবো একই পরিবারের একাধিক ভোটার আছে কি না। কিছু সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে। সেটা আমার অজানা।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এড. আবুল বাশার বলেন, কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ দিয়েছে, লোকজনের কাছ থেকে অভিযোগের কথা শোনেছি। কিন্ত আমি লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিবো। নয়ত এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই।
এ বিষয়ে শ্রীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাহালুল আলম বাচ্চু জানান, হালনাগাদ ভোটার তালিকায় একই পরিবারের একাধিক ছাত্র থাকায় মা-বাবা কে ভোটার করা হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাই এ বিষয়ে নির্বাচনটি যেন সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হয় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবী করছি।
আহবায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান- চিঠিটি পেয়েছি, তবে কমিটির আহবায়কসহ কমিটির সবাই একসাথে সমন্বয় করে প্রতিবেদন জমা দিবো ।
আহবায়ক কমিটির সদস্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামান তরফদার জানান, শোনেছি আমাকে আহবায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় চলে আসায় চিঠিটি হাতে পাইনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।