প্রতিনিধি কুলিয়ারচর : কুলিয়ারচরে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বাক্ষী পুরনো আমগাছ না কেটে উপজেলা ডাকঘরের (নতুন) রাস্তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো ভবন ভেঙে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে কুলিয়ারচর উপজেলা ডাকঘরের নতুন ভবনের সামনে থাকা অর্ধশত বছরেরও বেশি পুরনো আম গাছসহ কয়েকটি ফলজ গাছ কেটে সোজা রাস্তা নিয়ে গেইট ও দেয়াল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানাজানি হলে স্বাধীনতার প্রতীক পুরনো আমগাছ না কেটে উপজেলা ডাকঘরের (নতুন) রাস্তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেতনা পরিবেশ ও মানব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মুছা বলেন, ১৯৬৯ সালে ছাত্র আন্দোলনের সমস্ত সভা সমাবেশ এ আমগাছ ও তাল গাছের নিচে অনুষ্ঠিত হতো। তিনি বলেন, অর্ধশত বছরেরও বেশি পুরনো এ আম গাছটি স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক। আর এ পুরনো আমগাছসহ একাধিক ফলজ গাছ কেটে সোজা করে রাস্তা নেয়ার সিদ্ধান্তটি আসলেই অযোক্তিক। তিনি পুরনো আমগাছসহ একাধিক ফলজ গাছ কেটে সোজা করে রাস্তা না করার জোর দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি শেখ জহির জানান, রাস্তা অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু এ রাস্তা করতে গিয়ে যেন পুরনো আম গাছটি কেটে ফেলা না হয়। তিনি বলেন, যেহেতু আম ও কাঁঠাল গাছের দু’পাশেই অনেক জায়গা রয়েছে সেহেতু নতুন ভবন থেকে একটু বাঁকা করে রাস্তা নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
কুলিয়ারচর চিলড্রেন ভিলা কিন্ডারগার্টেন এন্ড স্কুলের প্রিন্সিপাল নয়ন মণি সাহা বলেন, শুধু রাস্তা সোজা করার জন্য যদি এ পুরনো আম গাছটি কর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি গাছটি রক্ষা করে যেন রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। পৌরশহরের পূর্ব গাইলকাটা মহল্লার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুরাদ বলেন, অর্ধশত বছরের পুরনো গাছটি রেখে রাস্তা নির্মাণ করা হোক।
কুলিয়ারচর বাজারে অবস্থিত মা ফার্মেসীর স্বত্ত¡াধিকারী কামরুল হাসান সোহেল বলেন, ফলজ এবং ছায়াযুক্ত পুরনো আম গাছটি রেখে রাস্তার উন্নয়ন কাজ করার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার হারুনুর রশিদ বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন সে অনুযায়ী আমি কাজ করবো। উপজেলা পোস্টমাস্টার ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, পুরনো আম গাছটি না কেটে রাস্তার উন্নয়ন কাজ করার জন্য স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।
ভৈরব উপ বিভাগের পরিদর্শক মাহবুবে ইলাহি বলেন, স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হবে। ঢাকা ডাক অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোবিন্দ কুমার দাস বলেন, পোস্ট ভবন বরাবর সোজা করতে, রাস্তাটির সৌন্দর্য ও ফোকাসে আনতে গেলে গাছটি কাটা পড়ে যায়। তিনি বলেন, এভাবে কাজটি না করলে সামনে থেকে পোস্ট ভবনটি দৃশ্যমান হবে না আর ভালো দেখা যাবে না। তবে স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হবে। এ বিষয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।