স্টাফ রিপোর্টার : কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানাধীন জমসাইর হাওরে কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ ও কটিয়াদী উপজেলার শত শত জিরাতি কৃষকদের টাকা পয়সা, গরু বাছুর ও জমির ফসল লুটপাটসহ ডাকাতি, দস্যুতা এবং সন্ত্রাসী তান্ডবে কুখ্যাত ডাকাত মানিক বাহিনীর হাত থেকে কৃষক বাচাঁও প্রতিবাদে সমবেত কৃষকরা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। গতকাল সকাল ১০টায় সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের কিশোরগঞ্জ মরিচখালী সড়কের পাশে পাতালজান ঈদগাহ মাঠে শত শত কৃষকদের উপস্থিতিতে মানববন্ধন কর্মসূচী শেষে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট স্বারকরিপি প্রদান করেন।
বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও তরুন রাজনীতিবিদ এডভোকেট এস.এম. শওকত কবীর খোকনের পরিচালনায় মানববন্ধনে এ সময় বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ আওলাদ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন বাবুল, ডা. হারুন অর রশিদ, নুরুল ইসলাম মেম্বার, গোলাপ সরকার ও কৃষক রিয়াজুল ইসলাম এবং মাহতাব উদ্দিন মাদু প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, জেলার অষ্টগ্রাম থানাধীন জমসাইর হাওর সামাইল বিলের পাড়ে কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ ও কটিয়াদী উপজেলার শত শত জিরাতি কৃষকদের উপর হাওরের কুখ্যাত ডাকাত মানিক বাহিনী সন্ত্রাসী তান্ডব চালাচ্ছে। প্রতিনিয়ত জিরাতি কৃষকদের টাকা পয়সা, গরু বাছুর ও জমির ফসল লুটপাটসহ ডাকাতি, দস্যুতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে কৃষকরা চরম অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে।
অষ্টগ্রাম থানাধীন জমসাইর হাওর সামাইল বিলের পাড় সাকিনে তিন উপজেলার শত শত কৃষকদের পৈতৃক ভূমি রয়েছে। প্রতি বছর বৈশাখী মৌসুমে উক্ত জমিতে তারা বোর ধান চাষাবাদ করে। অস্থায়ী ঘর নির্মান করে জিরাতি হিসেবে ৬ মাস বসবাস করে তাদের চাষকৃত জমি দেখাশোনা ও পরিচর্যা করে থাকে। কৃষকরা ওই সময় হাওরের চারন ভূমিতে গরুও পালন করে। তাদের বাড়ি ভিন্ন ভিন্ন থানায়। ডাকাত মানিক বাহিনীরা স্থানীয় বিধায় প্রতি বছর কৃষকরা জিরাতি হিসেবে উক্ত এলাকায় গেলে তাদের টাকা পয়সা, গরু বাছুর ও জমির ফসল লুটপাটসহ ডাকাতি, দস্যুতা এবং আমাদের উপর সন্ত্রাসী অপতৎপরতা চালিয়ে কৃষকদের সর্বস্ব নিয়ে যায়।
ডাকাত মানিক বাহিনী ২০০৮ সনে এক কৃষক বাড়ি ফেরার পথে মারপিট করিয়া ধান বেঝাই নৌকা ও নগদ টাকা পয়সা এবং আনুসঙ্গিক জিনিষপত্রসহ প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কৃষক মোশারফ হোসেন (২৫) পিতা আজিজুর রহমান, সাং শেহড়া, থানা ও জেলা কিশোরগঞ্জ বাদী হয়ে নিকলী থানায় একটি ডাকাতি মামলা করে। নিকলী থানার মামলা নং ১২ তারিখ ১২-০৬-২০০৮ ইং। ধারা ৩৯৫/৩৯৭ দঃবিঃ। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডাকাত মানিকসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ডাকাতি মামলার চার্জশীট দাখিল করেন। বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন আছে।
এমনি ভাবে প্রতি বছরেই ডাকাত মানিক বাহিনী জিরাতি কৃষকের টাকা পয়সা, গরু বাছুর ও জমির ফসল লুটপাটসহ ডাকাতি, দস্যুতা এবং কৃষকদের উপর সন্ত্রাসী তান্ডবলীলা চালায়। জীবনের ভয়ে কৃষকরা কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। ডাকাত মানিক বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে চরম হতাশার মধ্যে কৃষকদের প্রতিনিয়ত দিন কাটাতে হয়।
বক্তারা আরো বলেন, চলতি বছর ২৩/০৪/২০২৪ ইং তারিখ রাত অনুমান ৮ টার সময় ধান কাটার শ্রমিকদের মজুরী দেওয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে এক কৃষক ৪ টি ষাড় গরু ব্যাপারীর কাছে ৬,২০,০০০/ (ছয় লক্ষ বিশ হাজার টাকা ) বিক্রি করে টাকা গুলো জিরাতি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। গরু বিক্রির খবর পেয়ে মানিক বাহিনী ওই রাতেই ডাকাতি করে ওই কৃষকের সবগুলো টাকা নিয়ে যায়। এ সময় মানিক বাহিনীর লোকজন রামদা ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কৃষক কিতাব আলী, আজিজুল হক, মাসুদ মিয়া, আঃ সালাম, নুরুল্লাহ ওরফে জিন্নত আলী ও পিয়াসকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় তারা জিরাতি ঘরটিও কোপাইয়া ও বাইরাইয়া ভাংচুর করে ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি করে। এ ঘটনায় কৃষক মাহতাব উদ্দিন, পিতা মৃত ছোবেদ আলী, সাং পাথারিয়াপাড়া, নানশ্রী, থানা করিমগঞ্জ, জেলা কিশোরগঞ্জ বাদী হয়ে আসামী মানিক মিয়া (৪৮), পিতা লবু মিয়া, সাং টেংগুরিয়া, থানা নিকলী জেলা কিশোরগঞ্জসহ ১৫ জনকে চিহিৃত ও আরো অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামী করে কিশোরগঞ্জ আদালতে একটি সিআর ডাকাতি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ১৯৮/২০২৪ তারিখ ২৯/০৪/২০২৪ ইং। ধারা ৩৯৫/৩৯৭ দঃবিঃ। বর্তমানে উক্ত ডাকাতি মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছেন।
এমনিভাবে জেলার তিন উপজেলার শত শত কৃষকরা মানিক বাহিনীর বর্বর সন্ত্রাসী তান্ডব ও লুটপাটে অতিষ্ট হয়ে পড়ছে। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যাযাবরের ন্যায় জীবন যাপন করে বছরে একটি মাত্র ফসল উৎপাদন করে। কৃষকদের সেই ফসল ও টাকা পয়সা ডাকাত মানিক বাহিনী লুন্ঠন করে নিয়ে যায়। কৃষকদের পরিবার পরিজন সারা বছর অনাহারে আর অর্ধাহারে দিন কাটায়। তখন তাদের কষ্টের সীমা থাকেনা।
এদিকে মানববন্ধনে সমবেত কৃষকরা জানান, বর্তমান সরকার কৃষি ও কৃষক বান্ধব সরকার। দেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সরকারের এই সুনাম ও অগ্রযাত্রা আরো অগ্রসর করতে হলে কৃষকদের রক্ষা করতে হবে।
স্বারকলিপিতে তারা আরো উল্লেখ করেন, দেশের আইন শৃংখলা রক্ষায় সর্বোচ্চ কর্ণধার হিসেবে গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয় স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে সততা ও নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে দেশব্যাপী আইন শৃংখলার সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। এ সকল কৃষকদের আকুল আবেদন হাওরের এই কুখ্যাত ডাকাত মানিক ও তার সাঙ্গ পাঙ্গদের কবল থেকে কৃষকদের রক্ষার জন্য স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
তাই শত শত কৃষকরা ডাকাত মানিক বাহিনীর হাত থেকে বাচাঁও প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে তাদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক কঠোর ও দৃষ্ঠান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট একটি স্বারকলিপি স্বারকলিপি প্রদান করেন। স্বারকলিপির অনুলিপি কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ দেশে আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত সরকারের বিভিন্ন দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তাগনের নিকট প্রেরন করা হয়েছে।