প্রতিনিধি অষ্টগ্রাম : কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে সারাদিনে চার ঘন্টাও বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র গরমের সাথে যোগ হয়েছে সীমাহীন লোডশেডিং। প্রতি মাসেই বিল আসছে স্বাভাবিকের চেয়ে ডবল। কোথাও কোথাও বিল করা হচ্ছে ৫ থেকে দশগুণ। অনেকের অভিযোগ বাড়ির ভেতরে থাকা মিটার না দেখেই ইচ্ছেমত বসানো হচ্ছে মিটার রিডিং। গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মনগড়া বাড়তি বিদ্যুৎ বিল। কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিঠামইন জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ করছেন গ্রাহকদের অনেকে। অফিসে ধন্যা দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিকার মিললেও হয়রানির ভয়ে অনেকে অভিযোগও করেন না।
এলাকাবাসী জানান, অষ্টগ্রাম সদরে ৩/৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলেও বাকি সাতটি ইউনিয়নে দুই ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকেনা। এর মধ্যে কাস্তুল ইউনিয়নের বাহাদুরপুর ও বাজিতপুরের হুমাইপুর ইউনিয়নে বিগত পাঁচ দিন যাবৎ বিদ্যুতের কোন দেখা নেই। নষ্ট হয়েছে ফ্রিজের সব মাছ-মাংস। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় মাসের পর মাস পোল্ট্রি খামারীরা তাদের ব্যবসায় লোকসান গুনছেন। বৃদ্ধি পেয়েছে পোল্ট্রি মুরগীর দাম। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন মৎস চাষী, ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা, ভ্যান চালকসহ ছোট ও মাঝারী সাইজের কারখানা মালিকগণ। হ্রাস পাচ্ছে উৎপাদন, বৃদ্ধি পেয়েছে যানবাহনের ভাড়া ও পরিবহণ ব্যয়। চিকিৎসা সেবায় দেখা দিয়েছে অব্যবস্থাপনা। নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও রোগীসহ সাধারণ মানুষ তীব্র গরমে অতিষ্ট হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিঘিœত হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া। এরই মাঝে বাড়তি বিলের বোঝায় ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা।
অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়নের গ্রাহক মীর হুমায়ুন কবির এ প্রতিনিধিকে জানান, মিটারের সাথে আমার বিদ্যুৎ বিলের কোন মিল নেই। আমার ছোট পরিবার। আমি সারা মাস বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে সোলার ব্যবহার করেছি। তাও আমার বিল এসেছে ১৪৯৪ টাকা। একই অভিযোগ করেছেন কাস্তুলের রাজু খান। তিনি বলেন, আমার একটি ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা, ও একটি বাতি জ¦লে। এতেই আমার বিল এসেছে ৬৫১ টাকা। একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, বাড়িতে একটি ঘরে ২টি বৈদ্যুতিক পাখা, ২টি বাতি আর একটি ফ্রিজ চলে। তাতেই আমার বিল এসেছে প্রায় ১ হাজার ৪ শত ২৭ টাকা। তার দাবি নির্ভুলভাবে মিটারের তথ্য সংগ্রহ করলে বিল প্রায় অর্ধেকে নামবে।
এমন অভিযোগ কেবল এ তিন জনের নয়। উপজেলার অনেকেই বিভিন্ন সময় বাধ্য হচ্ছেন বাড়তি বিল দিতে।
এ বিষয়ে মিঠামইন জোনাল অফিসের ডিজিএম কামাল হোসেন মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জনান, আমাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজার, বিদ্যুতের প্রয়োজন ১৮ মেগাওয়াট আর আমরা পাচ্ছি মাত্র ৬ মেগাওয়াট। তাই এ লোড শেডিং। তিনি বলেন, লোড শেডিং বেশি হলে বিলের পরিমান স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায়। আর মিটার রিডিং ভুল করার কারণে যদি বিল বেড়ে যায় তখন আমাদের কাছে নিয়ে আসলে আমরা তা সংশোধন করে দেব। আদৌ এই লোড শেডিং ও বিল বিড়ম্বনার স্থায়ী সমাধান হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি এর কোন জবাব দিতে পারেননি।