স্টাফ রিপোর্টার, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) উজ্জ্বল কুমার সরকার : কৃষকদের হাতে হাতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের বীজের প্যাকেট। কারো হাতে সরিষা, কারো হাতে সূর্যমুখী আবার কারো হাতে ভুট্টার বীজের প্যাকেট! মুখে হাসি নিয়ে কৃষি অফিস থেকে বের হচ্ছেন কৃষকরা। এ চিত্র দেখা গেছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায়। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার এসব বীজ ও সার পেয়ে উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ উপজেলার কৃষকরা।
জানা গেছে, বাজারে শীতকালীন শস্যবীজের চাহিদা বাড়লেও সাম্প্রতিক বন্যা ও নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতায় ঊর্ধ্বমুখী প্রায় সব ধরনের শস্যজাতীয় বীজপণ্যের দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কৃষি অফিসের বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ তাদের জন্য যেন আশীর্বাদ।
এছাড়াও নানা সমস্যার কারণ দেখিয়ে যেসব জমি কৃষকরা অনাবাদি রেখে দিত, বিনামূল্যে সার ও বীজ পেয়ে সেসব জমিতে ফসল উৎপাদন করে সফলতা পেয়েছে কৃষকরা। এক ফসলি জমিকে দ্বিফসলি এবং দ্বিফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বাড়ছে খাদ্য উৎপাদন।
স্থানীয় কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমূখী, চীনা বাদাম, শীত কালীন পেঁয়াজ, মুগ, মসুর ও খেসারি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় হোসেনপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার ১ হাজার ৩৫ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে প্রতি জন কৃষক ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি করে এমওপি ও এক বিঘা জমির বীজ বিতরণ করা হবে।
গত সোমবার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে কৃষি অফিস প্রাঙ্গনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিন্দ্য মন্ডল কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন জাতের বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে।
হোসেনপুর উপজেলার প্রণোদনার তালিকাভূক্ত চাষীরা জানান, সরকার প্রণোদনা দেয়ায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের জন্য বীজ ও সার তাদের কেনা লাগছে না। এতে তারা বেশি বেশি ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছেন।
ধুলজুরী গ্রামের কৃষক দ্বীন ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও বিভিন্ন জাতের বীজ বিতরণ করা হয়। আমাদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় না, ফলে অল্প পুঁজিতে শাক-সবজি উৎপাদন করে আমরা অধিক লাভবান হতে পারি।
আরেক কৃষক কাইয়ুম মিয়া বলেন, আমন ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি চলছে, আমন ধান ঘরে তোলার পর জমিগুলো খালি পড়ে থাকতো। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার পাওয়ায় এবার সরিষা আবাদ করবো।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুরাইয়া নাজনীন বলেন, মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে এসব সার ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। বিনামূল্যে পাওয়া প্রণোদনার বীজ ও সার কৃষি পণ্যের উৎপাদন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবির বলেন, কৃষি প্রণোদনা পেয়ে এ উপজেলার কৃষকরা ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে আরো বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন।
প্রণোদনা পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমছে। অপরদিকে বাড়ছে খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন প্রকার ফসলের উৎপাদন। সরকারের এই উদ্যোগকে কৃষকরা স্বাগত জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।