স্টাফ রিপোর্টার : হোসেনপুরে স্বনামধন্য আফতাব বহুমূখী ফার্মের আওতাধীন ২০টি পোল্ট্রি খামার বিনা নোটিশে হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ওইসব পোল্ট্রি খামারের সাথে জড়িত মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারী। তাই ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে জরুরি প্রতিকার দাবি করেছেন।
জানা যায়, নব্বই দশকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত আফতাব বহুম‚খী ফার্মের ওই পোল্ট্রি খামারগুলো দ্বিপাক্ষীক চুক্তিতে দীর্ঘ বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্যারেন্ট স্টক ডিম উৎপাদন করে আসছিলো।
কিন্তু স¤প্রতি খাদ্য, ঔষধ, বাচ্ছা ও খামারের অন্যান্য উপকরণের ক্রমাগত ম‚ল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হয় খামারিদের। এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ পোল্ট্রি খামারগুলো হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় খামারিরা মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে উপজেলার আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের জামাইল গ্রামের পোল্ট্রি খামারি মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল ও ধুলজুরি গ্রামের খামারি ফরিদ উদ্দিনসহ অনেকই জানান, পোল্ট্রি খামারগুলো বন্ধ হওয়ার আগে আফতাব বহুমূখী ফার্ম কর্তৃপক্ষ তাদের এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশ কিংবা প‚র্ব সতর্কবার্তা দেয়নি। ফলে এহেন পরিস্থিতিতে তারা চোখ মুখে শুধু সরর্ষের ফুল দেখছেন। তাছাড়া হঠাৎ করে আয়ের প্রধান উৎস বন্ধ হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্থ খামারি আব্দুল ওয়াহাবসহ অনেকেই জানান, তাদের খামারগুলো বন্ধ থাকায় শেডসহ খামারের সমস্ত উপকরণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও পোল্ট্রি খামারগুলো স্থাপনকালে মোটা অংকের ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন তারা। এসব ঋণের কিস্তি সময়মতো দিতে না পারলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবেন। তাই ক্ষতিগ্রস্থ খামারিদর দাবি আফতাব কর্তৃপক্ষ যেন ওইসব বন্ধ পোল্ট্রি খামারগুলো অতি শীঘ্রই চালু করে খামারিদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত নব্বই দশকের শুরুতে প্রয়াত শিল্পপতি জহিরুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জেলার বাজিতপুর উপজেলার ভাগলপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় আফতাব বহুম‚খী ফার্ম। ওই ফার্মের সাথে হোসেনপুর উপজেলার ২০ জন খামারি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর উদ্যোক্তা হিসেবে তাদের নিজস্ব জায়গা ও অর্থায়নে মুরগী লালন-পালনের শেড তৈরি করেন।
এরপর আফতাব ফার্ম কতৃপক্ষ তাদের প্যারেন্ট স্টক মুরগির বাচ্চা, মুরগির খাবার, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে সহায়তা করতেন। আর এভাবেই বাচ্চাগুলো লালনপালন শেষে মুরগীগুলো ডিম দেওয়া শুরু করলে ওই ডিমগুলো আফতাব বহুম‚খী ফার্মে নিয়ে বয়লার প্যারেন্ট বাচ্চা উৎপাদন করতেন।
যেহেতু ওই ডিমগুলো কেবলমাত্র বয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে ব্যবহৃত হতো, তাই সেগুলোর উচ্চ ম‚ল্য নির্ধারণ করে (প্রতিটি গড়ে ২২-২৪ টাকা) লাভের একটি নির্দিষ্ট অংশ ওইসব খামারিদের দেওয়া হতো। ফলে খামারিরা জনপ্রতি ডিম উৎপাদন চলাকালীন সময়ে ৭০-৮০ হাজার টাকা এ খাত থেকে পেয়ে লাভবান হতেন। যা দিয়ে ভালোভাবেই তারা খামার ও সংসারের দৈনন্দিন ব্যয় মিটাতে পারতেন। কিন্তু খামারগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা এখন অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সাবেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও খ্যাতিমান পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ এজেডএম বদরুল হাসানসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিমাসে উপজেলার ২০টি পোল্ট্রি খামারে মধ্যে একসাথে সবগুলো ডিম উৎপাদনে না গেলেও অন্তত ১০টি খামারে গড়ে দু’লাখেরও বেশি ডিম উৎপাদন হতো। এতে একদিকে যেমন জাতীয় অর্থনৈতি চাঙ্গা হতো, অন্য দিকে মাংস উৎপাদন করে দেশের পুষ্টির চাহিদা মেটাতেও সহায়ক ভ‚মিকা রাখতো এসব খামার। পাশাপাশি প্রতিটি খামারে বেকার শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হতো। কিন্ত হঠাৎ বন্ধ হওয়ার ফলে ওইসব পোল্ট্রি খামারে কর্মকর্তারাও জীবনের মাঝ পথে এসে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে আফতাব বহুম‚খী ফার্মের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ভাগলপুর অফিসের সংশ্লিষ্ট শাখার এজিএম মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, ধারাবাহিক লোকসান টেকাতে ও কৌশলগত কারণে খামারগুলো বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাছাড়া এগুলো আপাতত চালু হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই কম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।