প্রতিনিধি কটিয়াদী : কথায় আছে, ঋতুর রাজা বসন্ত আর মাসের রাজা জ্যৈষ্ঠ। এই জ্যৈষ্ঠ মাসকে আবার আরেক নামে ডাকা হয় ‘মধুমাস’। এই মাসেই আমাদের দেশের গাছে গাছে পেকে থাকে লিচু, আম, জাম কাঁঠালসহ যতসব সুস্বাদু সুমিষ্ট ফল। এই মাসেই বাজার সয়লাব হয়ে থাকে এসব ফলে।
আবার প্রখর রোদের এই তপ্ত মাসেই বাজারে আসে তালের শাঁস। এটা মধু মাসের প্রচলিত অন্য সব ফলের তালিকায় না পড়লেও তীব্র গরমে পেটে একটু ঠান্ডা পরশ দিতে তালের শাঁসের যেন জুড়ি নেই। এই সময়টাতে গ্রাম-শহর, সর্বত্রই ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা তালের বিশাল বিশাল ছড়া নিয়ে বসেছেন। দিন দিনই এর দাম এবং কদর বাড়ছে।
কটিয়াদীতে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে তালের শাঁসের। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খেতে অত্যন্ত সুস্বাধু তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে শহর গ্রামের হাটে বাজারে সর্বত্র। ২০ টাকা থেকে শুরু করে মান ভেদে ৬০ টাকা পর্যন্ত একটি তাল বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই ৫টি ১০টি তাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দোকানিকে বললেই ধারালো দা দিয়ে দক্ষ হাতে শাঁস বের করে পলিথিনে ভরে দিচ্ছেন। তালের শাঁস বের করারও বেশ মুন্সিয়ানা আছে।
সবাই পারে না। মুরগির ঘিলা আকৃতির শাঁসের ভেতর থাকে মিষ্টি রস। তুলতুলে শাঁসে একটু ফুটো হয়ে গেলেই পুরো রস বেরিয়ে যাবে। শাঁসের আকর্ষণই কমে যাবে। অথচ এই রস যেন শাঁসেরই এক অন্যতম অনুষঙ্গ। যে কারণে বেশ সতর্কতার সঙ্গে দক্ষ হাতে শাঁসগুলো কাটতে হয়। নানা বয়সের মানুষেরই তালের শাঁসের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। তবে এর প্রতি বেশি আকর্ষণ থাকে শিশুদের।
যে কারণে অভিভাবকরা দাম বেশি হলেও শিশুদের জন্য বাসায় কয়েকটি শাঁস না নিয়ে গেলে যেন কেমন অতৃপ্তি থেকে যায়। আবার পাড়ামহল্লায় বিক্রি হলে শিশুরাও টাকা নিয়ে এসে তালের শাঁস কিনে নিয়ে যায়। তালের কদর বেড়ে যাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন মৌসুমি ক্ষুদ্র তাল বিক্রেতারা।
তালের পাইকার ব্যবসায়ী শাওন ও সালাউদ্দিন বলেন, কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এবং পার্শ্ববর্তী উপজেলা ঘুরে ঘুরে গাছের মালিকদের কাছ থেকে তাল সংগ্রহ করি। সাধারণত একটি গাছে কতটি তাল রয়েছে তার একটা অনুমান করে দাম নির্ধারণ করা হয়। গড়ে একটি গাছ থেকে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার তাল কিনি। তারপর তা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি।
তাল বিক্রেতা সোলাইমান মিয়া বলেন, জ্যৈষ্ঠ মাস আসলেই তালের শাঁস সবার কাছে বেশ প্রিয় হয়ে যায়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে এর ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে শিশুদের কাছে তো তালের শাঁস অমৃতে সমান। রুবেল হোসেন কটিয়াদী বাজারে তালের শাঁস বিক্রি করছেন। তিনি জানান, প্রতিদিন তাল বিক্রি করে তার হাজার টাকার চেয়েও বেশি লাভ থাকে। তিনি ভ্যানে করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে তাল বিক্রি করেন।
তালের শাঁসের গুণগত উপকারিতা সম্পর্কে স্থানীয় এক পুষ্টিবিদ বলেন, তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ দেহের পানি শূন্যতা দূর করে। এর এ্যামাইনো অ্যাসিড প্রোটিনের একটি ভালো উৎস্য। একই সাথে ভিটামিন ও মিনারেলর উৎস্য এই তালের শাঁস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), বি২ (রিবোফ্লাভিন) এবং ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও পটাশিয়ামের থাকে। তালে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতেও সাহয্য করে।