স্টাফ রিপোর্টার : ‘শুকনায় পাও আর বর্ষায় নাও’ এই প্রবাদটি যেন এখন মিথ্যা হয়ে গেছে। একসময় জেলার সবচেয়ে দুর্গম হাওর এলাকাগুলো সময়ের ব্যবধানে পাল্টে গেছে। হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন।
এরই ধারাবাহিকতায় হাওরবাসীর আরও একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলাকে যুক্ত করে নির্মিত হতে যাচ্ছে এক কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু। প্রায় পৌনে দুই’শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।
ইতোমধ্যে সেতুটির প্রায় ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এই সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে হাওরের সাথে সারাদেশের যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। ২০২৩ সালের ১৪ মে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বাঙ্গালপাড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় নতুন বাজার এলাকায় মেঘনা নদীতে পাকা সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন।
এর আগে ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এলাকাবাসী জানায়, হাওর এখন অনেক পাল্টে গেছে আগের মত এখন আর যাতায়াতের কষ্ট করতে হয়না। আমাদের হাওরবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে এই একটা সেতুর জন্য আমাদের স্বপ্নটা অসম্পূর্ণ থেকে ছিল। এই সেতু সম্পন্ন হলে আমাদের যাতায়াতসহ সারাদেশের সাথে একটি যোগাযোগের সুগম পথ তৈরি হবে দেশের অর্থনীতিতে হাওরের মানুষ একটি ভালো ভূমিকা রাখবে।
কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. আমিরুল ইসলাম জানান, হাওরবাসীর এই স্বপ্নের সেতুটি বাস্তবায়ন হলে বিস্ময়কর অল ওয়েদার সড়ক হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দ্রুত গতিতে দেশের যেকোনো স্থানে যেতে পারবে। ইতোমধ্যে সেতুটির প্রায় ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, আমার বাবা সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সারাটা জীবন এই হাওরের মানুষদের নিয়ে চিন্তা করেছেন; স্বপ্ন দেখেছেন হাওরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের।
তিনি যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন শুধু হাওর নিয়েই ভাবতেন। আমাকে খুব তাগিদ দিতেন হাওরের কোথাও কোনো ত্রæটি আছে কি-না। আমিও বাবার আদেশ মতে হাওরের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গিয়েছি, খোঁজ নিয়েছি, উপলব্ধি করেছি তাদের কষ্ট।
হাওর দুর্গম এলাকা হওয়ায় জেলা শহর ও রাজধানীর ঢাকা শহরে যাতায়াত করতে হলে লঞ্চ বা ট্রলারে একদিন রাত যাপন করে পরদিন গ্রামে আসতে হতো। আর এখানে এ সেতু নির্মাণ হলে রাজধানী ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়কপথে সারা বছর যোগাযোগ করা যাবে। এর ফলে হাওরের কৃষি পণ্য ও মিঠা পানির মাছের ন্যায্য মূল্য পাবে হাওরবাসী।
জানা যায়, অষ্টগ্রামের পূর্বে হবিগঞ্জের লাখাই, উত্তরে সুনামগঞ্জ আর দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর অবস্থিত। চারপাশ দিয়ে নদী থাকায় এপার-ওপারের সাথে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এ কারণে এক জেলা থেকে অন্য উপজেলা সদর বা জেলায় যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সেতুটি নির্মাণ হলে দুই জেলার যাতায়াত করাসহ রাজধানী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে।
তাই গ্রামকে শহরে রুপান্তর করতে ও রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ সুগম করতেই দুই জেলার সংযোগ ব্রিজের মেঘনা নদীর উপর ১ কি.মি. সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে পাশ করা হয়। ১৭৭ কোটি ২৩ লাখ ৫১ হাজার ১০৮ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জেলার সবচেয়ে বড় এ সেতু প্রকল্পে রয়েছে ২৪টি এবাটমেন্ট পাইল, ২৪৬ টি পিয়ার পাইল, দুটি এবাটমেন্ট পাইল ক্যাপ, ২৬ টি পিয়ার পাইল ক্যাপ, দুটি অ্যাবাটমেন্ট ক্যাপ, চল্লিশটি গার্ডার পিএসপি ৬৪টি গার্ডার আরসিসি এবং ২৭টি ¯øাব। আগামী বছরের অক্টোবরে এ সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে।