মো. জামাল আহমেদ, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি ১০তলা ভবন থেকে ফেলে শিশু হত্যার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে হত্যার বিষয়টি রহস্যজনক বলছে পুলিশ।
গত ১৮ জুন সকাল ১০টায় পৌর শহরের কমলপুর নিউ টাউন ফুল মিয়া সিটি এলাকায় একটি ১০ তলা বিল্ডিংয়ের নিচের ঝোঁপের ভেতর থেকে ৭ দিনের নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুর মা তৃশা ঊসমান, বান্ধবী সুমাইয়া ও কাজের মেয়ে মীম ও শিলাকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ভৈরব থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম।
শিশুটির নাম তাসনিদ এহসান। তার বাবা ডা. উসমান গণি। তিনি স্থানীয় সেন্ট্রাল হাসপাতালের মালিক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক। এ বিষয়ে স্বজনরা জানান, বাচ্চাকে খাইয়ে ঘুমিয়ে ছিল মা। বাবা ঘুমিয়ে ছিল আরেক রুমে। ঘরে শিলা ও মিম নামে দুইজন কাজের লোকও ছিল। এ ছাড়াও সুমাইয়া নামের একজন নারী ছিল। সে শিশুটির মায়ের বান্ধবী।
হঠাৎ রাত তিনটার দিকে মা বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গেলে ১০ মিনিটের মধ্যে বাচ্চাটি নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তৎখানিক ভৈরব থানায় এসে অভিযোগ দেয় নিঁখোজ শিশুটির পরিবার। সবাই খোঁজাখুঁজি পর গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে কাজের মহিলার মাধ্যমে শিশুটিকে বাড়ির পাশে একটি ঝোপ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এসময় কাজের দুই মেয়ে, নবজাতকের মা ও তার বন্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা নিয়ে আসে পুলিশ।
এ দিকে স্থানীয়রা জানান, ডা. উসমান গণির দ্বিতীয় স্ত্রী তৃশা। তাদের পরিবারে বোরাক নামের দেড় বছরের একট ছেলে সন্তান রয়েছে। সাত দিন আগে ডা. উসমান গনির মাধ্যমে সিজারিয়ান অপরেশনের মাধ্যমে নবজাতকের জন্ম হয়।
তবে বেশ কিছুদিন যাবত তাদের পরিবারে কলহ চলছিল। প্রায় সময় তাদের বাসা থেকে চাৎকার চেচামেচির শব্দ শুনতে পাওয়া যেত। স্থানীয়রা আরো জানান, ভবনে কেউ প্রবেশ করেনি। তাই ঘরে থাকা লোকদের দ্বারাই ঘটনাটি ঘটেছে। শিশুটিকে বিল্ডিং থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
নিহতের মা তৃশা আক্তার জানান, আমার ছেলে তাসনিদ এহসান বয়স ৭ দিন। মধ্যরাতে কে বা কারা আমার শিশু সন্তানটিকে নিয়ে গেছে। আমি বাথরুমে গেলে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে ফিরে এসে আমার সন্তানকে বিছানায় পাইনি। আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে এ বিল্ডিংয়ের কেয়ার টেকার আফজাল মিয়া জানান, ভোর ৫টায় ডা. উসমান গনি আমাকে জানান তার সন্তান কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। তার চিৎকারে পাশের ফ্লাটের প্রতিবেশিরা জেগে যায়। পরে সবাই মিলে অনেক খোঁজখুঁজি করেও বাচ্চাটি পাওয়া যায়নি। কাজের মেয়ে জানায়, বাল্ডিংয়ের অদূরে একটি ঝোপে বাচ্চাটি পড়ে আছে। পুলিশ এসে মরদেহ নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, শিশুটির মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। বিল্ডিং থেকে ফেলা হয়েছে কি না বা মেরে ফেলেছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে হত্যার বিষয়টি রহস্যজনক। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।