বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

ভোলায় পাঁচ দিনে ১১টি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার, আতঙ্কিত এলাকাবাসী

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪
  • ৯৭ Time View

শতাব্দী ডেস্ক : ভোলার বিভিন্ন স্থান থেকে গত ৫ দিনে ১১টি রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ সাপ স্থানীয়রা মেরে ফেললেও একটি সাপ বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল, মানুষের বাসাবাড়ি ও খেলার মাঠে একের পর এক বিষাক্ত এই সাপ উদ্ধারে খবরে জেলার সর্বত্র জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার শিবপুরের ‘গরিবের ডুবাই নামে খ্যাত’ চায়না ইপিজেড বালুর মাঠে স্থানীয় ছেলেরা খেলতে গিয়ে দেখতে পায় বিষাক্ত সাপ রাসেল ভাইপার। মুহূর্তের মধ্যে তারা সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেললেও পুরো এলাকায় মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে চরম আতঙ্ক। এর আগে তজুমউদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের একটি বসত বাড়ির সামনে ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের বাড়িতে একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়। এছাড়া গত বুধবার বিকালে জেলার তজুমউদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠে দেখা মিলে এই সাপের।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশায় ইউনিয়নে পাকার মাথা এলাকায় বসত বাড়ির পাশের জালের সঙ্গে পেঁচানো অবস্থায় একটি রাসেল ভাইপার পাওয়া যায়। মঙ্গলবার রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জালু মাঝির বসতঘর থেকেও একটি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত রোববার লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ এলাকায় একটি বাড়ির শৌচাগারে এ সাপ দেখা যায়। এছাড়াও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও সাগর উপক‚ল উপজেলা চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও ৫টি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। তবে তজুমউদ্দিন উপজেলায় পাওয়া একটি সাপ এখনও বনবিভাগের তত্ত¡াবধানে রয়েছে।

এ ঘটনার পর থেকে জেলাজুড়ে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে। স্থানীয় জেলে হাবিব মাঝি বলেন, নদীতে মাছ শিকার করে ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় বালুর মধ্যে এই সাপটি দেখতে পাই। পরে আরও লোকজন এসে সাপটিকে রাসেলস ভাইপার বলে নাম দেয়। এই সাপ এর আগে আর কখনও দেখিনি। সাপটি দেখতেও অনেক ভয়ানক। অন্য সাপের থেকে দেখতে অনেকটাই আলাদা মনে হলো। সাপটি দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে মেরে ফেলে। তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের মেঘনার পাড়ের মোদী ব্যাবসায়ী জয়নাল মিয়া জানান, তার বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখতে পান।

পরে ঘরের লোকজন খোঁজা-খুঁজির একপর্যায়ে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারকে ঘর থেকে বের হতে দেখেন। তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। একপর্যায়ে সাপটিকে খুঁজে পিটিয়ে মেরে ফেলে উপস্থিত লোকজন। সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিশু বলেন, এর আগে আমার ইউনিয়নে এই বিষধর সাপের দেখা পাইনি। পর পর দুই দিন এই সাপের সন্ধান মেলায় আমার ইউনিয়নবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি ও বনবিভাগের লোকজন আসার আগেই সাপটি স্থানীয়রা মেরে ফেলে। শুধু ইউনিয়ন কিংবা গ্রামেই নয়, শহরের মানুষের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাসেলস ভাইপার সাপের খবরে। এরইমধ্যে শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ির আশপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বিøচিং পাউডার ছিটাচ্ছেন বাড়ির মালিকরা। ভোলা পৌর ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুজাহিদুর রহমান বলেন, বাড়ির নিচ তলায় বসবাস করি বিধায় ইদানীং মনের মধ্যে সারাক্ষণ শুধু সাপের আতঙ্ক কাজ করছে। তাই বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে চতুর্দিকে বিলিসিং পাউডার ছিটিয়ে রেখেছি। একইভাবে শহরের বিভিন্ন বাড়ির আঙিনাসহ আশপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি বিলিসিং পাউডার ছিটিয়ে রাখছেন বাসা বাড়ির মালিকরা।

সর্বশেষ গত শুক্রবার বিকালে চরফ্যাশন পৌর এলাকার কালিবাড়ীর পেছনের রাস্তায় বাচ্চাসহ রাসেলস ভাইপার দেখে স্থানীয়রা বাচ্চাসহ সাপটিকে পিটিয়ে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলে। ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, রাসেলস ভাইপার সাপ লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেয়ার কারণে হয়তো সাপটি লোকালয়ে চলে এসেছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শফিকুজ্জামান, বলেন চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত ও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহির্গামী বিষ দাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হয়। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty