কটিয়াদী, প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের প্রয়াত শ্রমিকলীগ নেতা বাতেন ফকিরের স্ত্রী গুলেছা বানুর (৭৫) দিন-রাত কাটে খোলা আকাশের নিচে। চার-পাঁচদিন যাবত রাস্তার পাশে গাছের নিচে অনাহারে পড়ে আছেন। রাতে বৃষ্টি শুরু হলে বাজার পাহাড়াদার তাকে তুলে এনে একটি দোকানের বারান্দায় রেখে যান। খাবার বলতে কিছুই নেই। কেউ একজন একমুঠো মুড়ি দিয়ে ছিলেন। ক্ষুধায় কাতর হয়ে একটু খেয়ে বাকীটুকু সামনেই রেখে দিয়েছেন। আর ক্ষীণকণ্ঠে বলছেন- বাবাগো আমারে বাঁচাও। ছেলেডা আমারে রাইখ্যা কই গেল! পাঁচদিন ধইরা পইরা রইছি। কোন খাওন নাই। আমারে বাঁচাও।
জানা যায়, গুলেছা বানুর স্বামী পাঁচ বছর পূর্বে মারা যান। তিনি ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নিজের কোন জমি জমা নাই। ৩০ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তার পরিত্যক্ত জড়াজীর্ণ ভবনে বসবাস করে আসছেন। স্বামীর মৃত্যু পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সেখানেই থাকেন। ছেলে কোন কাজকর্ম করে না, ভবঘুরে।
হাত পেতে যা পেতো নিজে খেতো মাকেও দিতো। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ছেলে নিরুদ্দেশ হয়। যাওয়ার আগে মাকে রাস্তার পাশে গাছের নিচে রেখে যায়। চলতে ফিরতে অক্ষম গুলেছা বানু সেখানেই পড়ে ছিল। রাতে বৃষ্টি শুরু হলে বাজার পাহাড়াদার তাকে তুলে নিয়ে একটি দোকানের বারান্দায় রেখে যায়। পরে সেখান থেকে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় নিয়ে রাখা হয়।
গুলেছা বানুর বাবার বাড়ি একই ইউনিয়নের বৈরাগিচর গ্রামে। তার বড় ভাই মৃত ফালু ফকির ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী বাতেন ফকিরও আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু সহায় সম্পদ বলতে কিছুই নেই। তিনি বলেন, একমাত্র ছেলে হোসেন ভবঘুরে হলেও ঘরে ফিরতো। মাঝে মাঝে অত্যাচারও করতো। রাগকরে বলতো মরিনা কেন? তার কথা শুনে আমারও রাগ হতো। কিন্তু ছেলে নিরুদ্দেশ হওয়ায় এখন অনাহারে দিন কাটছে।
মসূয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বেতাল গ্রামের মেম্বার হাদিউল ইসলাম দুলাল বলেন, গুলেছা বানুকে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় নিয়ে রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে বিভিন্ন রকম সাহায্য সহযোগিতা দেয়া হয়। মাসূয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বাক্কার বলেন, আমি নিজেও অসুস্থ। খোঁজ নিতে পারিনি, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাব। এ বিষয়ে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জেনেছি, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।