মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

মিঠামইন হাওরে বাড়ছে পর্যটক : নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪
  • ৯১ Time View

স্টাফ রিপোর্টার, মিঠামইন : কিশোরগঞ্জের নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলার প্রায় সবটুকু এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হাওর। এই হাওর উপভোগ করতে নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণপ্রেমীরা ছুটে আসেন কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওরে। তবে পর্যটকদের ভিড় বাড়ায় প্রভাব পড়ছে হাওরের পরিবেশের ওপর।

প্রতিদিন কিশোরগঞ্জের চার উপজেলার হাওরে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। তবে এই পর্যটন শিল্প যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে, তেমনি বাড়িয়ে দিচ্ছে পরিবেশ নষ্ট হবার ঝুঁকি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শুকনো মৌসুমে হাওর অঞ্চলের চাষাবাদ। কিশোরগঞ্জের চার উপজেলা নিকলী, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওর এলাকা হিসেবে পরিচিতি। বর্ষায় হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ছুটে আসেন প্রায় অর্ধলাখ প্রকৃতিপ্রেমী।

এ হাওরের সৌন্দর্যে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের স্বকীয়তা। ওপরে নীল আকাশ, নিচে বিস্তৃত নীল জল। হাওর পর্যটনকে ঘিরে এরই মধ্যে নিকলীতে গড়ে উঠছে হোটেল-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। বর্ষাকালের কয়েক মাস কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলসহ বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের জলরাশি মেলে ধরে পর্যটন এলাকার মোহনীয় রূপ। তবে পর্যটন শিল্পের প্রসার হলেও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাওর এলাকার পরিবেশ। শুকনা মৌসুমে চাষাবাদ ব্যাহত করছে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্য।

সরেজমিনে মিঠামইন বেড়িঁবাধঁ ঘুরে দেখা যায়, প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের প্লেট, ওয়ানটাইম বিরিয়ানির প্যাকেট, কফির কাপসহ অপচনশীল বিভিন্ন পলিথিন। তাছাড়া এই পর্যটনীয় এলাকায় ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা নদীর বুকে ভাসছে, এতে হারাচ্ছে হাওরের সৌন্দর্য। স্থানীয় কৃষক আবু মিয়া বলেন, এভাবে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া ময়লায় আমাদের পরিবেশের খুব ক্ষতি হচ্ছে। শুকনো মৌসমে হাল চাষ করতে গেলে প্লাস্টিকের বোতলগুলো ট্রিলারের দা এর মাধ্যমে টুকরো হয়ে জমিতে মিশে যায়।

এরপর জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে প্লাস্টিকের বোতলের টুকরায় আমাদের পা কেটে যায়। এ বিষয়ে সরকার বা ইউএনও যদি ভালো কোনো উদ্যোগ নিত তাহলে পরিবেশ আরও সুন্দর হত। মিঠামইন বেড়িবাঁধ এলাকার নৌকার মাঝিরা বলেন, বেড়িবাঁধ এলাকায় যেভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, সেভাবে যদি পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা হতো তাহলে সবার জন্যই ভালো। পরিছন্ন থাকলে পর্যটকদের জন্যও ভালো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিস্কার না করায় এখানে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। হাওরের সৌন্দর্য ও পরিছন্নতা রক্ষার্থে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন ব্যবহার ও তদারকি করা উচিত।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে আমরাই পরিবেশকে ধ্বংস করছি। এই বিষয়ে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। হাওরে যদি সৌন্দর্যতা ধরে রাখতে চাই তাহলে পরিছন্নতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা মনে করি পর্যটন শিল্প প্রসারের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় দরকার কঠোর নজরদারি। তাহলেই রক্ষা পাবে হাওরের কৃষি।

মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলম বলেন, মিঠামইন বেড়িবাঁধ এলাকায় গত বছর গ্রাম পুলিশ ও লেবারের মাধ্যমে একবার পরিস্কার করেছিলাম। গত ৩ বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক কিছু ডাস্টবিন বসিয়ে ছিল। কিন্তু, কিছুদিন পর কে বা কারা সেগুলো চুরি করে নিয়ে যায়।
তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছিল।

শুকনো মৌসুমে প্লাস্টিকের বর্জ্যরে জন্য কৃষকদের কৃষি কাজে সমস্যা হয়। এ বিষয়ে মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া বলেন, হাওরের যত্রতত্র ময়লা ফেলার বিষয়টি নতুন কিছু নয়, আমরা হাওরের পরিছন্নতা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছি। পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এলাকায় মাইকিং করা হবে। বেড়িবাধঁ এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দ্রæত ডাস্টবিনও দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty