তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মৃত বারী শাহ’র দাবিকৃত খেলাফত প্রাপ্ত কথিত পীর লুৎফর রহমানের আস্তানায় অপরিচিত লোকদের আনাগোনা ও দেওথান গ্রামের সরকারি রাস্তায় বিল্ডিং নির্মাণে অনিয়ম বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আল মামুন খান।
উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের দেওথান গ্রামের মৃত আবদুল বারী খানের ছেলে আল মামুন খান
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চলতি বছরের ৫ মে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তাড়াইল-নীলগঞ্জ সড়কে দেওথান গ্রামের বেতাইব্রীজ সংলগ্ন আস্তানায়ে লুৎফর শাহ নির্মাণকৃত বিল্ডিংটি সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে সড়কের উপর তৈরি করা হয়েছে।
ফলে এই সড়ক দিয়ে চলা বিভিন্ন প্রকার যানবাহনসহ মানুষ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। উক্ত বিল্ডিং সংলগ্ন স্থানে রোড আইল্যান্ড দেওয়ায় প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাসাদের মালিক কথিত পীর লুৎফর রহমান উক্ত এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় সে কারও কথায় কর্ণপাত করছেন না।
দ্বিতীয় অভিযোগে আল মামুন খান উল্লেখ করেন, আমি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। এই গ্রামের কথিত পীর লুৎফর রহমানের আস্তানার আশপাশে প্রায় সময় অপরিচিত কিছু লোকের সন্দেহ জনক ঘুরাঘুরি দেখতে পাই। লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কেউ এই এলাকা বা আশপাশের এলাকার নয়। তাদের এখানে আসার কারণ জানতে চাইলে একেক জন একেক রকম কথা বলায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় অনেকে কথা না বলে দ্রæত আস্তারনার ভিতরে ঢুকে পড়ে ও গেইট বন্ধ করে দেয়।
এলাকবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এই কয়েকজন লোক গত রমজান মাসের আগে থেকেই এখানে অবস্থান করছেন। মাঝে মাঝে বের হয়। এমনকি মুসলমানদের বৃহৎ ঈদ উৎসবেও তারা তাদের পরিবার পরিজনের কাছে যায়নি। কোনো দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র নয় তো? এরা এখানে কি করে এলাকাবাসীর প্রশ্ন ও সন্দেহ!
এছাড়াও পূর্বে এই আস্তানায় শিশু মৃত্যু, নারী কেলংঙ্কারিসহ একাধিক ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানেও তার ভক্তদের অশোভন কথাবার্তার অডিও, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাই। যা স্বাভাবিকভাবে সুশীল সমাজের কাছে নিন্দিত ও সমাজ বর্হিভূত। তাই বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।
কথিত পীর লুৎফর রহমানের বিষয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, দড়িজাহাঙ্গীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের কাছে জিজ্ঞেস করেন তিনিই সব বলতে পারবেন।
হেলাল উদ্দিনের কাছে কথিত পীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লুৎফর রহমান তিনি একজন পীর মানুষ। আমি তার আস্তানায় সবসময় আসা-যাওয়া করি। আপনি সারারাত পীরের আস্তানা পাহাড়া দেন এবং সড়কে ঘুরাঘুরি করেন কথাটা কতটুকু সত্যি। এ কথার উত্তরে তিনি বলেন, যা শুনেছেন তা সত্যি।
তাড়াইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক খানের কাছে শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষক হেলাল উদ্দিন রাতের পর রাত পীরের আস্তানা পাহারা দিয়ে দিনে স্কুলে এসে বাচ্চাদের কিভাবে ক্লাস করায় বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে কথিত পীর লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর দায়ের করা লিখিত অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একজন পীর মানুষ। আমার কাছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসে। তারা দিনের পর দিন আমার আস্তানায় অবস্থান করেন। এতে কোনো সমস্যা আছে বলে আমি দেখছি না।
এই আস্তানায় পূর্বে ঘটে যাওয়া শিশু মৃত্যু, নারী কেলংঙ্কারি সহ একাধিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- এসব ঘটনা একটা সময় ঘটে ছিল, এখন আর এসবের কোনো আওয়াজ নাই। আপনার ভক্তদের অশোভন কথাবার্তার অডিও, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসবের আমি কোনো তোয়াক্কা করি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন এর কাছে কথিত পীর লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ দুটি পেয়েছি। তদন্ত করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাশতুরা আমিনা ও তাড়াইল থানা (ভারপ্রাপ্ত) পুলিশ কর্মকর্তা মনসুর আলী আরিফের কাছে পাঠানো হয়েছে।