প্রতিনিধি তাড়াইল : ধলা জমিদার গিরিশ চন্দ্র পালের বাড়িটি কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত তাড়াইল উপজেলার ধলা নামক গ্রামে অবস্থিত। ১৩৩১ বঙ্গাব্দে জমিদার গিরিশ চন্দ্র পাল নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার কাটল বাড়ি জমিদারের নিকট থেকে তিন আনা জমিদারী ক্রয় করেন। বর্তমান বসত বাড়িটি ১৩৩৩ বঙ্গাব্দে নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়। বাড়িটি উদ্বোধনকালে ৪০ মণ মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল বলে স্থানীয় লোকজনের কাছে জানা যায়। গিরিশ চন্দ্র পাল প্রথম জীবনে একজন সুদখোর মহাজন ছিলেন। তিনি একজন বর্ণবাদী জমিদার ছিলেন। অযন্তে অবহেলায় পড়ে থাকা জমিদার বাড়ির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তাড়াইলবাসীর গর্বের জায়গা। উপজেলার ঐতিহ্য ও অস্থিত্বের সাথে মিশে আছে এ জমিদার বাড়িটিতে।
কথিত আছে যে, তার বাড়ীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নবর্ণের হিন্দু ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি হতে দিতেন না। দেশ বিভাগের পরে তিনি কলিকাতা চলে যান এবং তার বংশধরগণ সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়ীর ভিতরে মহিলাদের জন্য একটি সান বাঁধানো পুকুর এবং কাচারী বাড়ীর সামনে বিরাট পুকুর খনন করেন। সামনের পুকুরের প‚র্ব পার্শ্বে তার বাড়ীর লোকদের যে স্থানে শবদাহ করা হতো সেখানেই ছোট চৌচালা টিনের ঘর নির্মাণ করে রাখা হতো। প্রায় ১০ হতে ১২ টি ছোট চৌচালা টিনের ঘর ছিল। বর্তমানে সেখানে টিনের ছোট ঘরগুলো আর নেই।
১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর জমিদার ও তার স্বজনরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যান ভারতে। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে জমিদারের অনুপস্থিতিতে এ বাড়ি এস.এ রেকর্ড অনুমোদন হয় জমিদারের নামেই। ভ‚মি অফিসের তথ্য থেকে জানা গেছে, ৯টি ভিন্ন ভিন্ন দাগে প্রায় ১০ একর ভ‚মি নিয়ে ছিল এ জমিদার বাড়ি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় সমুদয় ভ‚মি ও বিভিন্ন স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় সরকার। দেশে রাজনৈতিক পালা বাদল ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় ইতিমধ্যে জমিদার বাড়ির প্রায় ৫ একর ভ‚মি অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে গেছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ম‚ল বাড়িসহ প্রায় সাড়ে ৫ একর ভ‚মি এখন দখলমুক্ত রয়েছে। তবে এ ভ‚মিতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ধলা উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা অফিস, ধলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও জমিদারের কাচারী নামীয় ভবনে অস্থায়ী ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস।
এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ৬টি ভিন্ন ভিন্ন দাগে ২ একর ৫৩ শতাংশ ভ‚মি রয়েছে জমিদার বাড়ির ম‚ল অংশে। মুগল ও পাশ্চাত্য রীতির মিশ্রনে চুন সুরকি দিয়ে গড়া বাড়ির ম‚ল অংশে দুটি সিংহের মুখোমুখি অবস্থানের প্রতিচ্ছবি সংবলিত দৃশ্যনন্দন ম‚ল ফটক, জমিদারের ম‚ল কাচারি, ভগ্নস্তুপে পরিণত অতিথিশালা, বাড়ির সামনে পিছনে ২টি পুকুর ও একটি সুবিশাল খেলার মাঠ।
দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আগত ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে এর স্থাপত্য নিদর্শন ও ধ্বংসাবশেষ আজও জানান দেয় জমিদারের অতীত জৌলস। অযন্ত অবহেলায় আর সংস্কারের অভাবে প্রাচীন ভবনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জৌলস হারানো দৃষ্টিনন্দন ভবনগুলোর কারুকার্য আজ খসে পড়ছে। নতুন প্রজন্মকে প্রতœতাত্তি¡ক এ অম‚ল্য সম্পদের ইতিহাস, ঐহিত্য জানানোর স্বার্থে বিস্মৃতির অতল গহŸরে হারিয়ে যাবার আগেই যথাযথ উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে বর্তমানে জমিদার গিরিশচন্দ্র পাল এর বংশধরদের পশিমবংগের সৌদপুরে “রথীন্দ্র” এবং ব্যারাকপুরে “অথীন্দ্র” নামে দুটি সিনেমা হল সহ তাদের অন্যান্য ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কলকাতার অভিনেতা তাপশ পাল চৌধুরী ও গিরিশ পাল এই জমিদারের বংশধর। বর্তমান সময়ে পরিত্যক্ত ভবনগুলো মেরামত করে ভবিষ্যত প্রজন্মদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্য হিসেবে রাখা যেত।