স্টাফ রিপোর্টার : তাড়াইলের পুরুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ব্যতিরেখে বা অবজ্ঞা করে শুধু শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি অন্যান্য পদের শূন্যকোটা বাদ রেখে শুধু সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচনকালীন উপকারভোগী এক সহকারি শিক্ষিকাকে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিয়োগের চেষ্টায়রত রয়েছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে। সভাপতি তার পদ ও ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করে পছন্দের প্রার্থীকে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির মাধ্যমে কায়দা-কৌশল ব্যবহার করে বেছে নেওয়ার জন্যই অসম্পূর্ণ নিয়োগ জারি করেছেন বলে জানান ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো: আমিনুল ইসলাম ভ‚ঞা।
এমন পাতানো নিয়োগের সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষকও জড়িত থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
একক অদিপত্যের বলে সভাপতির নামে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় গত ০১/০৭/২০২৪ তারিখ সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান, মোঃ আমিনুল ইসলাম ভ‚ঞা ও মাহমুদুর রহমান খান একটি অভিযোগ প্রদান করেন। অভিযোগে নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবস্থাপনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
অভিযোগ ও সরেজমিন সূত্রে জানা যায়, তাড়াইল উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরুড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি অবস্থিত। স্কুলটিতে ২০২১ সালের ১৮ মার্চের জনবল কাঠামো নীতিমালা অনুযায়ী সহকারি প্রধান শিক্ষক, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহকারি কাম হিসাব সহকারি, নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নকর্মী ও অফিস সহায়ক একটি করে পদ শূন্য রয়েছে। পদগুলো শূন্য থাকায় বিদ্যালয়টির শিক্ষাব্যবস্থায় কিছুটা শীতিলতা বিরাজ করছে।
বর্তমান নির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা স্কুলের শিক্ষার উন্নতি বজায় রাখার স্বার্থে ম্যানেজিং কমিটির সভায় সবগুলো শূন্যপদে লোকবল নিয়োগের প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধিদের ব্যতিরেখে আজ্ঞাবহ শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে ৫টি শূণ্যপদ স্থগিত রেখে বা বাদ রেখে শুধু সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন।
গত ২ জুন ও সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি ৩ জুন ২০২৪ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে ও স্থানীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ব্যাংক একাউন্ট স্কুলের নামীয় নয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে সবকটি শূন্যপদে কেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি এবং নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যদের ব্যতিরেখে বা অবজ্ঞা করে ম্যানেজিং কমিটির সভায় আলোচনা না করে শুধু সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করায় স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির বিষয়টি বিবেচনায় আনছে ক্ষুব্ধ অভিভাবক প্রতিনিধিরা।
সভাপতির এমন কাÐে হতাশ অভিভাবক মহল ও নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধিরা। একপেশী নিয়োগের ব্যাপারে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলামকে ব্যাংক একাউন্টের বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে ভুল হওয়ায় পরেরদিন সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে সঠিক করা হয়েছে বলে জানান। তবে তার নামে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পূর্বে রেজুলেশন করা হয়েছে বলে মুঠোফোনে উল্লেখ করেন। তবে রেজুলেশনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একমত না হওয়ায় স্বাক্ষর দেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারকে জানান।
সভাপতি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির প্রতিনিধিদের ব্যতিরেখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় দিনদিন সন্দেহ বেড়েই চলেছে। সবকটি শূন্যপদে নিয়োগ দিলে এমনটা হতো না বলে জানান ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত আরেক সদস্য মো: আমিনুল ইসলাম খান।
এদিকে ব্যয় কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ রয়েছে প্রায় ৫ মাসের মত। বাকি শূন্যপদগুলো নিয়োগে কি এই কমিটির সভাপতি সময় পাবে? না পাবে না, বলে তিনি এমন ধোকাবাজির নিয়োগ স্থগিতের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
এদিকে আদৌ ব্যয় কমিটি ও আয় কমিটির কোন সভা করা হয়নি। যার ফলে অভিভাবক সদস্যরা অর্থনৈতিক বিষয়ে জ্ঞান লব্ধ করতে পারেনি। তাই অর্থনৈতিক দুর্নীতির বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায়নি বলে জানান স্থানীয় এক অভিভাবক।
অপরদিকে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মুজিরুর হক ভ‚ঞা একজন অস্থির দাম্ভিকতার মানুষ বলে সভাপতি এর সুযোগ নিয়ে একটি পরিকল্পিত, দুর্নীতিযুক্ত নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারে বলে ধারণা করছেন অভিভাবক সদস্যরা।
এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিতে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে চাইলে এলাকা ও প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদী বিশৃংখলা ও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় মহল। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টিতে জোর নজর দিয়ে সবকটি শূন্য পদে আগামীতে নিয়োগ দিয়ে স্কুলে পাঠদানের সুযোগ করে দিবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন অভিভাবক মহল।