আব্দুল কুদ্দুস, প্রতিনিধি কটিয়াদী : কটিয়াদীতে বর্ষাকালে ঝাঁকিজাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য খুব চোখে পড়ত। পেশাদার জেলেরা ছাড়াও সাধারণ সৌখিন মৎস্য শিকারিরাও ঝাঁকিজাল দিয়ে মাছ ধরতেন। তবে বর্তমানে সেই ঝাঁকিজালের ব্যবহার অনেক কমে এ উপজেলাসহ বাংলাদেশের অনেক স্থানে জালের ব্যবহার প্রচুর কমে যাচ্ছে। এর মূল কারণ এই জাল ব্যবহারে অতীতের মতো যথেষ্ট মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জালের ব্যবহার বিলুপ্তির পথে।
জানা যায়, জাল বাংলাদেশের প্রাচীনকাল থেকে মাছ ধরার একটি কৌশল। এর মধ্যে ঝাঁকি জাল অন্যতম। ঝাঁকি জালের উপরের প্রান্তে সরু রশি বাঁধা (৪/৫ হাত) থাকে। জালের নিচের দিকে লোহার ছোট ছোট কাঠি যুক্ত করা হয়। যাতে পানিতে জাল ফেললে তাড়াতাড়ি ডুবে যেতে পারে এবং কোনোভাবে মাছ পালাতে না পারে। মাছ ধরার সময় খাল, পুকুর বা নদীর তীর থেকে রশিটি হাতে রেখে জাল পানিতে ছুড়ে মারা হয়। পরে রশি ধরে টেনে জাল তোলা হয়। জালের নিচে অনেক ধরনের মাছ আটকা পড়ে। তার মধ্যে পুঁটি, চিংড়ি, রামসোস, পোমা, ফাইলশা, কার্প ও নলা মাছ বেশি ধরা পড়ে।
স্থানীয় কৃষক হাবিব হাওলাদার জানান, এই জালে আগের মতো মাছ উঠছে না বিধায় ব্যবহার কমে যাচ্ছে। স্থানীয় জেলে মোতালেফ জানান, সারা দিন জাল দিয়ে মাছ ধরলে দুই থেকে তিন’শ টাকার মাছ পাওয়া যায়। তাই এই জালের ব্যবহার এখন বিলুপ্তির পথে।
একাধিক মৎস্যজীবী জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদীসংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা-নালা-পুকুর-বিল থেকে ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশী রাক্ষুসে মাছের চাষ এবং মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো এসব কারণে ৫০টির বেশি দেশী প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। আর এসব কারণেই ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ শিকার বিলুপ্তির পথে।