প্রতিনিধি, ভৈরব : ভৈরবে মেহেদী হাসান নামের এক মাদকাসক্ত যুবককে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহত যুবক পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়া এলাকার বাহাদুর মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান (১৯)। খবর পেয়ে তার লাশটি শুক্রবার রাতেই পুলিশ উদ্ধার করে গতকাল শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ পাঠায়।
প্রতিবেশীরা জানান, নিহত যুবক মেহেদী হাসান মাদকাসক্ত ছিল। তার অত্যাচারে মা-বাবাসহ পুরো পরিবার অতিষ্ঠ ছিল। শুক্রবার সকালে তার মা ও ভাই অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার যুব সমাজের কয়েকজন যুবকের হাতে তুলে দেন মেহেদীকে। পরে তাকে যুব সমাজের যুবকরা স্থানীয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে সেনাবাহিনীর কাছে ভবিষ্যতে মায়ের উপর হাত না তোলা ও পরিবারের উপর অত্যাচার না করার অঙ্গিকার করে ক্ষমা চেয়ে চলে আসে মেহেদী।
পরে বিকেলে তার পরিবার লোক মাধ্যমে জানতে পারে কে বা কারা মেহেদীকে মারধোর করে আহত অবস্থায় শহরের নিউটাউন এলাকার রেল লাইনের পাশে সড়কে ফেলে রেখেছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয়দেরকে সাথে নিয়ে মেহেদীকে ঘটনাস্থল নিউটাউন এলাকা থেকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ৭টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় যুব সমাজের যুবক সাব্বির, রিফাত ও নিলয় জানায়, মেহেদী তার মাকে মারধোর করতো। তার মা ও ভাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা যুব সমাজের ছেলেরা মেহেদীকে সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে গেলে সেখানে সে ভবিষ্যতে নেশা না করা ও মাকে মারধোর না করার অঙ্গিকার করে চলে আসে। আমরাও যার যার কাজে চলে যাই।
পরে মেহেদীর মা বিকেলে ফোন করে আমাদেরকে জানান তার ছেলেকে কে বা কারা মেরে আহত করে নিউটাউন এলাকায় ফেলে রেখেছে। এখবর জানতে পেরে আমরা যুব সমাজের ছেলেরা তার পরিবারকে সাথে নিয়ে মেহেদীকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের মা রানু বেগম জানান, আমার ছেলে আমাকে প্রতিদিন মারধোর ও অত্যাচার করতো। গত শুক্রবার সকালে তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে সে আমাকে মারধোর করে। পরে ছেলেকে আইনের হাতে তুলে দিতে আমরা স্থানীয় যুবকদের হাতে তাকে তুলে দেই। তারপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খবর পায় সে আহত অবস্থায় নিউটাউন এলাকায় পড়ে আছে। এসময় যুবসমাজের ছেলেরাও বলতে পারছেনা তাকে কারা কিভাবে আহত করে মারল। এখন আর কি বলব, আমার ছেলের মৃত্যুতে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।
এ বিষয়ে নিহতের বাবা বাহাদুর মিয়া বলেন, আমার ছেলে মাদকাসক্ত ছিল। তার অত্যাচারে আমার পরিবার অতিষ্ঠ ছিল। গত ১৫ দিন আগে সে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে আসে। বাড়িতে এসেই তার মাকে মারধোর করে টাকার জন্য অত্যাচার শুরু করে। আমার ছেলের বিষয়ে আমি ইউএনও বরাবর অভিযোগও দিয়েছিলাম। আমি তার মৃত্যুতে কাউকে অভিযুক্ত করবো না। এসময় তিনি নিউজ না করতেও সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে মেহেদী হাসান নামের এক যুবককে যুবসমাজের কয়েকজন যুবক ও তার অভিভাবকরা হাসপাতালে নিয়ে আসলে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এসময় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করলে লাশটি তারা দ্রæত তাদের বাসায় নিয়ে গেলে আমরা ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করি। সে কিভাবে আহত হয়ে মারা গেল তা ময়না তদন্তের রিপোর্টে প্রমাণ হবে।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার উপ পরিদর্শক (এসআই)নজরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তার বাড়িতে যায়। প্রাথমিক সুরাতহাল রিপোর্টে মেহেদীর শরীরে ও হাতে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। এতে মৃত্যু নিয়ে রহস্যর সৃষ্টি হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ কিশোরগঞ্জে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আল আমিন ও ভৈরব- কুলিয়ারচর সার্কেলের এএসপি মোঃ দেলোয়ার হোসেনসহ সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে নিহত মেহেদী হাসানের বাড়িতে যায়।
নিহত মেহেদী মাদকাসক্ত ছিল বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানায়। সে কিভাবে কখন কারা তাকে আহত করে মারল তা তদন্তের বিষয়। তবে এই বিষয়ে তার মা-বাবা কান্নাকাটি করলেও কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ এখনই করতে রাজী হয়নি। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করবে। হত্যার ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে যদি প্রমাণ হয় তবে অপরাধীরা ছাড় পাবেনা। তবে লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিবে।