স্টাফ রিপোর্টার : কিশোরগঞ্জে ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ নূরুল ইসলাম খোকন (৫২) মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তিনি শহরের নিউটাউন এলাকার মৃত শামছুদ্দিন আহমেদ এর ছেলে। ঘটনার দিন দুপুরে পুরান থানা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন খোকন। সরকার পতনের একদফা ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে সে সামনের সারিতে অংশগ্রহণ করে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় পুলিশের গুলিতে তার সারা শরীর ঝাঁঝরা হয়ে পড়ে।
বুলেটবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মুমূর্ষু অবস্থায় লোকজন তাকে দ্রæত চিকিৎসার জন্য শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করে। কর্তব্যরত চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবায় দীর্ঘক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরলেও বুলেট বিদ্ধ ক্ষত স্থান দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণে সে নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। মুখে কথা বলার তার কোন শক্তি সামর্থ ছিলনা।
পরে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের উন্নত চিকিৎসায় সে কিছুটা সুস্থ হলে শরীর থেকে অনেকগুলো বুলেট অপসারন করা হয়। এখনও শতাধিক বুলেট তার শরীরে বিদ্ধ আছে। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ জানান, তার শরীরের স্পর্শ কাতর স্থানে বুলেট গুলো অপসারণ করা কখনো সম্ভব নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে দ্রæত উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণের পরামর্শ দেন।
এদিকে খোকন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার এমন দুর্ঘটনায় পরিবারটি এখন দিশেহারা। আবার ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করানো তার পক্ষে কোন মতেই সম্ভব নয়। তাই সে এক মাসের উপরে শরীরে শতাধিক বুলেট বহন করে ধুঁকে-ধুঁকে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
বিছানায় কাতর হয়ে শুয়ে থাকা নূরুল ইসলাম খোকনের সাথে কথা হলে তিনি হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, এক বিপ্লবের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমার রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাৎক্ষনিক জেলা বিএনপির প্রথম সারির ক’জন নেতৃবৃন্দ আমাকে দেখতে যায়। পরে এখন পর্যন্ততো কেউ আর আমার কোন খোঁজ খবর নেয়নি। এরপরও তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, দেশের মানুষ মুক্ত হয়েছে এটাই তার কাছে চরম পাওয়া।
আহত খোকনের বড় ভাই জেলা বিএনপির সদস্য নূরুল হুদা দিলু জানান, একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক বীরের ন্যায় দেশের মাটি ও মানুষের জন্য আমার ভাই রক্ত ঝরিয়েছে এতে কোন আফসোস নেই। সাধ্যমত ছোট ভাই এর চিকিৎসাসহ সার্বিক খোঁজ খবর রাখছি।