প্রতিনিধি, ভৈরব : ভৈরবের মেঘনায় নদীর ডিপোঘাট কেপিআই এলাকায় হঠাৎ ভাঙ্গনে ১শ মিটার ভ‚মির প্রায় ২০টি ঘর-বাড়ি, যমুনা অয়েল কোম্পানির একাংশসহ বেশ কিছু স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়াও মেঘনা গ্রাস করেছে নদী তীরবর্তী বাজারে প্রবেশের ৫০ মিটার একটি বাইপাস পাঁকা সড়ক। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় হুমকিতে পড়েছে ২টি রেল সেতু, কয়েক হাজার বস্তা সার সহ বিএডিসি গোডাউন এবং যমুনা, মেঘনা ও পদ্মাসহ ৩টি অয়েল কোম্পানির ডিপো।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদুয়ান আহমেদ রাফি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট। গতকাল রবিবার দুপুর ২টা পযর্ন্ত ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত শনিবার রাত তিনটার দিকে মেঘনা নদীর অববাহিকায় ভৈরবের ডিপোঘাট কেপিআই এলাকায় হঠাৎ করে ভাঙ্গন শুরু হয়। এই সময় অনেকেই ঘুমে থাকায় কিছু বুঝে উঠার আগেই এক এক করে ১৫ থেকে ২০টি ঘর-বাড়ি, যমুনা অয়েলের কোম্পানির স্থাপনার প্রতিরোধ দেয়াল, নামাজের ঘর এবং পাইপ লাইনসহ, দোকানপাট সহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল, ৫০ মিটার বাইপাস সড়ক ও নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
এছাড়া গতকাল রবিবার ভোরে অনেকই তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণেই এই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে গুরুত্বপ‚র্ণ জ্বালানি তেল সরবরাহ যমুনা, মেঘনা ডিপোঘাট, সার গুডাউন, ২টি রেল সেতু ও গুরুত্বপ‚র্ণ স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।
এসব স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে দেশের ২৭টি জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা সিলেট ও চট্টগ্রামের সাথে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয়রা আরো জানান, গত ২ বছর আগেও ডিপোঘাটের ২শ মিটার সামনে মেঘনার ভাঙনে চাতাল মিল এলাকায় ভাঙনে বেশ কিছু বসত ঘর ও মিলের মাঠ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে ২ জন নিহত হয়।
ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে হুমকিতে পড়বে ২টি রেল সেতু, কয়েক হাজার বস্তা সার সহ বিএডিসি গোডাউন ও যমুনা, মেঘনা ও পদ্মাসহ ৩টি অয়েল কোম্পানি ডিপো।
এর আগে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে ভৈরব রেলওয়ের ৫০ একর জায়গাসহ শতাধিক ঘরবাড়ি, অফিস এবং বাজারের ৩০টি ঘরসহ ১০ একর জায়গা প্রমত্তা মেঘনার স্রোত ও ঢেউয়ের কারণে নদীগর্ভে বিলীন হয়। মেঘনাপাড় রক্ষায় সরকার বাঁধ দিলেও ভাঙন ঠেকাতে পারছে না।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, রাতে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ যমুনা ওয়েল কোম্পানির দারোয়ান আমাদের ঘুম থেকে তুলে। আমরা কোন রকম পরিবারের সদস্যদের বাচাঁতে পারলেও আমরা সব কিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। এখন আমাদের মাথা গুজার ঠাঁই নেই। এই এলাকায় ৬০টি পরিবার রয়েছে। এদের মধ্যে ২০টি পরিবার আজ ছন্নছাড়া হয়ে গেছে।
নদীতে ড্রেজার লাগিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে আমরা আজ পথে বসেছি।
ভৈরব বাজার ফায়ার ষ্টেশন অফিসার রাকিব আহমেদ জানান, নদী ভাঙনের খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থলে আসি। এসে দেখি নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এসে জনগণকে সর্তক করছি এবং কিভাবে নদী ভাঙন রোধ করা যায় আমরা প্রস্তত আছি।
মুনা অয়েল কোম্পানীর ডিপো ইনচার্জ মতিউর রহমান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে নদী ভাঙনে বেশ কিছু ঘর-বাড়ি-দোকানপাট ভেঙে গেছে। নদী ভাঙন রোধ না করলে সারের গোডাউনসহ যমুনা ও মেঘনা ডিপোসহ গুরুত্বপ‚র্ণ স্থাপনা ভেঙে যাবে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) রেদুয়ান আহমেদ রাফি বলেন, আমি জেলা প্রশাসক ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি, দ্রæত ভাঙ্গন রোধে জিও বেগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।