স্টাফ রিপোর্টার : কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে একটি বিলের জলমহালের ইজারাদারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ইজারাদার মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে ইজারা মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা নিলেও চুক্তিপত্র করছেন না। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি দেনদরবার হলেও ইজারাদার কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন দরবারিরা।
অপরদিকে হতদরিদ্র মৎস্যজীবীরা ধারদেনা করে টাকা দিলেও কাগজে-কলমে বিলের অংশীদার হতে পারছেন না। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ বিষয়টি দ্রæত সুরাহা করা না হলে কয়েকদিন পরেই বিলটির মাছ ধরা নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের আশংকা করা হচ্ছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের চরকরনশী বিলের জলমহালের ইজারা নেন তাড়াইল উপজেলার বরুহা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নিতাই চন্দ্র বর্মণ। ছয় বছরের তিনি ইজারা নেন। প্রতি বছর সরকারের কোষাগারে ৮ লাখ ৭৮ হাজার ১২৫ টাকা জমা দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বিলটিতে মাছ ছাড়া ও সংরক্ষণের উপযুক্ত পুঁজি না থাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যকে নিয়ে আলোচনা করেন ইজারাদার।
আলোচনায় গুজাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাসুদ, দিগদাইর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ গোলাপ মিয়া, দিগদাইর ইউপির সাবেক সদস্য সুরুজ মিয়াসহ স্থানীয় দরবারিরা মিলে ইজারাদারকে ১৪ লাখ টাকা দেয়ার বিনিময়ে বিলের ১০ আনা শেয়ার হিসেবে করাতি গ্রামের মৃত ইছব আলী খানের ছেলে মিজানুর রহমান ও চরকরনশী গ্রামের হাবিবুর রহমান হাবু মিয়াকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দরবারিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত মাঘ মাসের শেষের দিকে ইজারাদার নিতাই চন্দ্র বর্মণকে ১৪ লাখ টাকা দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
মিজানুর রহমানের কাছ থেকে টাকা বুঝে নিচ্ছেন ইজারাদার নিতাই চন্দ্র বর্মণ-এমন একটি ভিডিও করা হয়। যেখানে দেখা যায়, ইজারাদার নিতাই চন্দ্র বর্মণ লুঙ্গির গোছায় টাকা ও দুই হাতে হাজারো টাকা বান্ডেল নিয়ে যেতে দেখা যায়। ১৪ লাখ টাকা নেয়ার পর দরবারিদের মাধ্যমে ইজারাদার আরো চার লাখ টাকা দাবি করেন বলে জানা গেছে। কিন্তু সে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ইজারাদার নিতাই চন্দ্র বর্মণ চুক্তিপত্র করছেন না। তিনি দরবারিদেরকে বার বার তারিখ দিলেও চুক্তিপত্র করা হচ্ছে না। এ নিয়ে স্থানীয় মৎস্যজীবী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মিজানুর রহমান জানান, তিনি অর্ধশতাধিক হতদরিদ্র মৎস্যজীবীদেরকে কাছ থেকে টাকা তুলে ইজারাদারকে দিয়েছেন। কিন্তু ইজারাদার চুক্তিপত্র না করায় তিনি মৎস্যজীবীদেরকে কিছুই বলতে পারছেন না। স্থানীয় ইউপি সদস্য সুরুজ মেম্বার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইজারাদার দেন দরবারের মাধ্যমে বিলের টাকা নিলেও এখন চুক্তিপত্র করতে গড়িমশি করছেন।
দিগদাইর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাপ মিয়া জানান, ইজারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদেরকে দিয়ে দরবার করিয়ে টাকা নিলেও এখন চুক্তিপত্র করছেন না বলে তিনি জানান। গুজাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাসুদ জানান, বিলটি ইজারা নিলেও সবাই মিলেমিশে বিলে মাছের চাষ করা হয়েছে। ইজারারদার বেশ কয়েকটি গ্রæপের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইজারাদার নিতাই চন্দ্র বর্মণকে জিজ্ঞেসা করলে তিনি প্রথমে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু ভিডিওতে টাকা নিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।