….অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক
স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও চিন্তক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে এখন অনেক অনেক পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সরকারও অনেক অনেক পুরস্কার দিচ্ছেন। তাছাড়াও ধনী লোকদের অবলম্বন করেও কিছু লেখক নানানভাবে পুরস্কারের বন্দোব্যস্ত করে থাকেন। একটা ব্যাপার হলো বাংলাদেশের এইসব পুরস্কারগুলো যাদেরকে দেওয়া হয়, এটা দেখতে গেলেই মনে হয় এইগুলো তো অত্যন্ত পক্ষপাতমূলক। প্রকৃত লেখক না খুঁজে দলীয় লেখকদের খুঁজে বের করা হয়।
দলদাস বলে একটা কথা আছে। সেইসব দলদাস লেখকদেরকেই তো পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, বাংলা একাডেমি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বাংলা একাডেমির গত বিশ বছরের পুরস্কারের তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে এরচেয়ে আরো যোগ্য লোক তো ছিলেন। একটু বিবেচনা করলেই যে কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি বুঝতে পারবেন পক্ষপাতিত্বভাবে পুরস্কার দেওয়ার ফলে আমাদের দেশের লেখকদের যেভাবে উৎসাহিত হওয়ার কথা সেইভাবে তারা উৎসাহিত হচ্ছেন না।
তিনি গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত আবু খালেদ পাঠান সাহিত্যপুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং অগ্রসর চিন্তার মানুষ প্রয়াত আবু খালেদ পাঠান স্মরণে গঠিত আবু খালেদ পাঠান ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পুরস্কার প্রদান কমিটির আহ্বায়ক ফয়সাল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশিষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাংবাদিক ফারুক মাহমুদ, এয়ার ভাইস মার্শাল(অব.) ও কবি এম সানাউল হক ও সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক কাজল রশীদ শাহীন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠের সম্পাদক আহমেদ উল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মাহমুদ জাহাঙ্গীর আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক অধ্যাপক আবুল কাশেম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবুল এহসান অপু, সদরুল উল্লাহ প্রমুখ।
অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশ এখন একটা অত্যন্ত জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা, আমি বলবো সম্ভাবনাময় কিন্তু খুব খারাপ অবস্থায় আছে। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।
এখন সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে সামনে কী আসে। তিনি বলেন, নির্বাচন করার যোগ্যতা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা আজো অর্জন করতে পারেননি। একটি জাতির রাজনৈতিক দল উন্নত চরিত্রের না হলে উন্নত চরিত্রের সরকার গঠিত হবে না। রাজনৈতিক দিক দিয়ে এখনো আমরা বেশ দুর্বল।
অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, উচ্চ সরকারি অবস্থানে থেকে অনেক সরকারি আমলা বিপুল অর্থ আত্মসাত করেছেন। এই বিষয়টাও যারা লেখক যারা শিল্পী তাদের ভবিষ্যত লেখার জন্য, চিন্তার জন্য খোরাকের বিষয়। তাদের বিরুদ্ধে লেখালেখির ফলে ওই লোকগুলো খুব একটা যে অপমানিত বোধ করছেন তা-ও না। তবে ভয় পাচ্ছেন যে জেলে নেয় কিনা।
তিনি বলেন, এইসব ঘটনার বিচার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হয়ে যাওয়া দরকার। জাতির কাছ থেকে যে টাকা অবৈধভাবে প্রবল লোভে তাড়িত হয়ে নিয়েছেন সরকারের উচিৎ সেই টাকাটা ফেরত এনে সরকারি ট্রেজারিতে জমা দেওয়া। তাদেরকে জেলে দেওয়া হবে কিনা সেটা পরের কথা। তারা যে সম্পদ আত্মসাত করেছেন সেটা সরকারি ট্রেজারিতে নিলে সেটা আমাদের জাতীয় আয়ে পরিণত হবে।
কেবল শাস্তি দিয়ে তো সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান হবে না। মানুষের স্বাভাবের মধ্যে, চিন্তা-কাজ এগুলোর মধ্যেই জটিলতা আছে। যারা ধনী লোক, সারা পৃথিবীতেই তারা এই ধরণের অর্থ-সম্পদের লোভ কোনোভাবেই সামলাতে পারেনা না।
আবু খালেদ পাঠান সাহিত্যপুরস্কার ২০২৪ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, পুরস্কার দেওয়ার উদ্দেশ্য যাতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা আনন্দিত হন, নতুনভাবে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হন। যারা এবছর পুরস্কার পেয়েছেন সেই কফিল আহমেদ এবং আফরোজা সোমা তারা নিজ নিজ কৃতিত্বের কারণেই পুরস্কার পেয়েছেন। এইজন্য আমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক-লেখিকাকে অভিনন্দিত করি এবং তাদের মঙ্গল কামনা করি ।
পরে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে প্রধান অতিথি ক্রেস্ট ও আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন। এর আগে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদ্বয়কে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে কফিল আহমেদ একটি গান পরিবেশন করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন পুরস্কার প্রদান কমিটির সদস্যসচিব মার্জিয়া লিপি।