প্রতিনিধি পাকুন্দিয়া, ক.ম.মুহিবুল্লাহ বচ্চন : কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত এই সংকট থাকায় উপজেলাবাসী যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালু থাকলেও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এছাড়া ডায়াবেটিস, প্রেসার, এ্যাজমাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রোগের ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে হাসপাতালটিতে। আর এজন্য সেবা নিতে রোগীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে পাকুন্দিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দফতর ঘুরে দেখা গেছে, টিকেট কাউন্টার থেকে প্রতিটি দফতরেই রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। বহির্বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তারদের সামনে লম্বা লাইন। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে কাঙ্খিত সেবা নিচ্ছেন অনেকেই। প্রচন্ড গরমের মধ্যেও লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সেবা নিচ্ছেন রোগীরা।
ওষুধ কাউন্টারে এনসিডি কর্ণারে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইন ধরে প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন অনেকে। দায়িত্বরত লোকজন বলছেন, অনেক দিন যাবত ওষুধের সংকট রয়েছে এই হাসপাতালে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক ওষুধ সরবরাহ নেই। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, প্রেসার, এন্টিবায়োটিক, এ্যাজমা এ ধরণের ওষুধের সংকট থাকে প্রতিবছরই। যা বরাদ্দ আছে তা থেকে অল্প অল্প করে রোগীদের সন্তুষ্ট করা হচ্ছে।
জানা যায়, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে ৩১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ১৫ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জন উপস্থিত থেকে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। বাকি তিনজন চিকিৎসক অন্যান্য হাসপাতালে সংযুক্ত থেকে বেতন-ভাতাদি নিচ্ছেন। একজন চিকিৎসক আড়াই বছর যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়াও তিনজন নার্সের পদও এখানে খালি রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ রোগী বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসেন। গত এক মাসে ২৪হাজার রোগী বহির্বিভাগে টিকেট কেটে সেবা নিয়েছেন এ হাসপাতাল থেকে। যা ঢাকা ডিভিশনে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা নিতে আসা রোগীর তালিকায় অষ্টম। অথচ হাসপাতালটি মাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট।
হাসপাতালে ওষুধ সংকটের কারণে ডায়াবেটিস, প্রেসার, এ্যাজমাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রোগের ওষুধের সরবরাহ মাসের পর মাস বন্ধ থাকে। এক মাস ওষুধ ঠিকঠাক মতো দিতে পারলেও পরবর্তী কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয় আবার ওষুধের জন্য। প্রতিনিয়তই তুলনামূলকভাবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাক্তারগণ প্রেসক্রিপশনে এক সপ্তাহের ওষুধ লিখে দিলেও ওষুধ কাউন্টার থেকে তিন দিনের বেশি ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।
হাসপাতালটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও মাত্র দুটি ভবনে এর কার্যক্রম চলছে। একটি জরুরী বিভাগ অন্যটি ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য। পুরাতন মূল ভবনটি সংস্কার ও মেরামতের অভাবে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। কেবিনসহ ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী।
কর্তৃপক্ষ বলছে, গত তিন বছর যাবত কোনো মেরামত হয়নি বিধায় এ অবস্থা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়লকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এখানকার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী হাসপাতালটিকে ৫০শয্যা থেকে ১০০শয্যায় উন্নীত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী রেহানা আক্তার নামের একজন জানান, তিনি দীর্ঘদিন যাবত প্রেসার ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। তার প্রতিনিয়তই ডায়াবেটিসের ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। আর্থিক সংকটে হাসপাতাল থেকে ফ্রি ওষুধ নিতে আসি। কিন্তু প্রায় সময়ই এসে ওষুধ পাই না। ওষুধ নেই বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর-এ-আলম খান বলেন, স্বল্প জনবলের মধ্যে যারা রয়েছেন তাদেরকে নিয়ে রোগীর প্রয়োজনীয় সেবাদানে কাজ করে যাচ্ছি। জনবলের অভাব পূরণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সংকটের সমাধান হবে। এছাড়াও ডাক্তারদের অন্যত্র সংযুক্তি বাতিলের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে সুপারিশ করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ডাক্তার সংকট রয়েছে। কয়েকজন দুই মাস মেয়াদী ট্রেনিং করছে। সেখান থেকে ফিরলেই আশা করছি কিছুটা সংকট কেটে যাবে। ওষুধের টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। অচিরেই সরবরাহ বাড়বে। ভবন মেরামতের ব্যাপারটিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।