প্রতিনিধি, পাকুন্দিয়া, মুহিব্বুল্লাহ বচ্চন : গত ৫ আগস্ট গাজীপুরের মাওনা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়। সেদিন পাকুন্দিয়ার সিফাত উল্লাহ (১৯) নামে এক মাদ্রাসার ছাত্রের গুলিবিদ্ধ লাশ রাস্তার ওপর পড়ে ছিল দীর্ঘক্ষণ। নিহত সিফাত উল্লাহ উপজেলার মুনিয়ারীকান্দা গ্রামের হাফেজ মাওলানা নুরুজ্জামানের ছেলে এবং সে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এমদাদুল উলুম জামিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিল।
ছেলে হারানোর পর দরিদ্র পিতা দিশেহারা হয়ে পড়েন, তার বাড়ীতে দীর্ঘদিন ছিল শোকের মাতম। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিহতের পরিবারকে ২ লাখ টাকা অনুদান দেন। পরবর্তীতে বিএনপির কিশোরগঞ্জ জেলা মহা সমাবেশে তার বাবাকে আরও ১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
নিহত সিফাত উল্লাহর পরিবারে শোক কাটতে না কাটতেই এবার প্রতারক চক্র তার পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিল ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। গত রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে এই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
নিহতের পিতা মাওলানা নুরুজ্জামান জানান, ৬ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিচয় দিয়ে ০১৮৯৮৩০৬৩৩৩ এই নাম্বারে একটি ফোন আসে। অপর-প্রান্ত থেকে বলা হয় শহিদ সিফাত উল্লাহর পরিবারের নামে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আজকে ২ লাখ টাকা পাঠাবে বাকী ৩ লাখ আগামীকাল পাঠাবে। এজন্য অ্যাকাউন্ট নাম্মার দিতে বলেন। নিজের নামে কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকার কথা জানালে পরিবারের অন্য কোন অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিতে বলেন।
এরপর নিহতের চাচা ঢাকায় অবস্থানরত আবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আমিনুল হকের অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেন। কিছুক্ষণ পরে জানানো হয় এটিএম কার্ডের ছবি পাঠাতে হবে। পরে হোয়াটস অ্যাপে এটিএম কার্ডের ছবি পাঠান। কিছু সময় পর জানতে পারেন প্রতারক চক্র নিহত সিফাত উল্লাহর চাচার অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার একশত পঞ্চাশ টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছে।
পরবর্তীতে বারবার ঐ নাম্বারে ফোন দিলেও রিসিভ হচ্ছে না। পরে ঢাকার কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন নিহতের চাচা আমিনুল ইসলাম। তার বাবা মাওলানা নুরুজ্জামান কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ছেলে হারিয়ে এমনিতেই আমার সব শেষ হয়ে গেছে, আমার স্বপ্ন ভেঙে গেছে, আমি খুব দরিদ্র মানুষ, এই সময়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ায় আমি বড় বিপদে পড়ে গেছি।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক, আমি আগেই নিহত সিফাত উল্লাহর পরিবারকে সতর্ক করেছিলাম এই ধরনের প্রতারণা হতে পারে, তারা তা বুঝতে পারেনি। খুব দ্রæত প্রতারকচক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে আশা প্রকাশ করেন। এছাড়াও পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রশাসন সবসময় সিফাত উল্লাহর পরিবারের পাশে থাকবে বলে তিনি জানান।