প্রতিনিধি, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) : কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার হাট-বাজারগুলো এখন পাকা তালের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত। দৃষ্টিনন্দন ও মুখরোচক এ ফল কিনতে মানুষের ভীড় লক্ষণীয়। কটিয়াদী সদর বাজারের তাল বিক্রেতা মাইদুল ইসলাম জানান, আমি প্রতিদিন গ্রাম থেকে তাল কিনে এনে হাট-বাজারে বিক্রি করি। এতে কিছু টাকা আয় হয়। গাছপাকা ছোট তাল ৪০ টাকা, মাঝারি তাল ৬০ টাকা ও বড় তাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি করি। আর হয়তো কয়েকদিন হাট-বাজারে তাল বিক্রি করতে পারবো। এরপর তালের সিজন শেষ হয়ে যাবে।
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে একেক ঋতুতে একেক রকম ফলের ধুম পড়ে গ্রাম-গঞ্জে। এখন বাংলায় চলছে শরৎকাল, আশ্বিনের শেষ ভাগ। তালগাছ থেকে ধপধপ করে পড়ছে পাকা তাল। ভাদ্র-আশ্বিনে পাকা তাল দিয়ে পিঠা, বড়া, পায়েস সহ নানা রকম খাবার তৈরির রীতি বহুকাল থেকেই চলে আসছে। বাংলায় বারো মাসে তেরা উৎসব এখনো ধরে রেখেছে গ্রাম-গঞ্জের নর-নারীরা।
যেসব বাড়িতে তালগাছ আছে তারা ভোরেই ঘুম থেকে জেগে তালগাছ তলা থেকে তাল সংগ্রহ করেন। আর যাদের তালগাছ নেই তারা হাট-বাজার থেকে তাল কিনে এনে সহজ পক্রিয়ায় তাল চিপে রস বের করে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে গুড়-চিনি, দুধ ও গরম মশলা দিয়ে পাতিলে তুলে জ্বাল করে নেয়।
তৈরি করা সুস্বাদু তালের রস থেকে পিঠা, বড়া ও পায়েসসহ নানা রকমের খাবার তৈরি করা হয়। তালের ২টি জাত রয়েছে। তা হচ্ছে মহিষা তাল ও দুধা তাল। মহিষা তাল দেখতে কালো, আকারে বড় আর দুধা তাল দেখতে লালচে আকারে একটু ছোট ।
উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম জানান, আমার এক আত্মীয় বাসায় কয়েকটি তাল দিয়ে ছিলেন। সেগুলোর রস দিয়ে পিঠা ও বড়া তৈরি করে খেয়েছি। বোয়ালিয়া গ্রামের জাহানারা জানান, প্রতিবছর আমি তাল দিয়ে পিঠা ও বড়া তৈরি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাই । গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে তাল খুব প্রিয় খাবার। তাই এখন তালের পিঠা, বড়া ও নানা রকম খাবার তৈরির ধুম পড়েছে।
কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ঈশা খান বলেন, তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে, যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় তাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায় ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও তাল বেশ উপকারী। তালে আছে ভিটামিন-বি, তাই ভিটামিন-বি এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে।