মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

তাড়াইলে প্রকৃতিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছ কৃষ্ণচুড়া ফুল

রুহুল আমিন, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • Update Time : শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১১৯ Time View

তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: বাংলার অতি পরিচিত সাধারণ একটি নাম ‘কৃষ্ণচুড়া ফুল’। কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলাসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় এটি দেখা যায়। কৃষ্ণচূড়া বাঙালির কাছে অতি পরিচিত একটি ফুল। বাঙালির কবিতা, সাহিত্য, গান ও নানা উপমায় এর রূপের মোহনীয় বর্ণনা বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মোহনীয় রূপে প্রকৃতির শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষ এখনো গ্রামবাংলার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের ছোঁয়া পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষ্ণচূড়া তার রক্তিম আভা ছড়ানোর মাধ্যমে জানান দেয়- সে এখনও টিকে আছে প্রকৃতিকে সাজাবে বলে।

সরেজমিনে তাড়াইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কৃষ্ণচূড়ার গাছে থোকায় থোকায় ফুল ফুঁটেছে। সবুজের বুকে শুধুই লালের রাজত্ব। দূর থেকে মনে হয় ময়ূর তার রাঙা পেখম মেলে ধরেছে প্রকৃতির মাঝে। তাড়াইল সদর বাজার পোদ্দারপট্রি পোস্ট অফিসের সামনেই রয়েছে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। এখানকার বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এই গাছটা এখানকার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছে। তারা বলেন, গ্রীষ্মের দুপুরে স্বস্তি মেলে লাল কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায়। কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায়। আবার রোদে খারাপ লাগলে ওই কৃষ্ণচূড়া গাছ তলায় বসেন অনেকেই।

কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এ বৃক্ষ যেন এখন বাঙালির ঐতিহ্যের একটা অংশ হয়ে গেছে সবার অলক্ষে। এদেশে এসে পরিচিত হয়েছে নতুন নামে। অনেকেই মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণের নাম থেকে এ গাছ ও ফুলের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর সবচেয়ে বড় খ্যাতি হচ্ছে মোহনীয় রক্তিম আভা। সবুজের বুক চিরে বের হয়ে আসা লাল ফুল এতটাই মোহনীয় যে, পথচারীরাও থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হন। প্রকৃতির শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষের উচ্চতা তেমন একটা বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত উপরে উঠলেও তার শাখা-প্রশাখা বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃ থাকে। কৃষ্ণচূড়া পুরো গ্রীষ্ম ও বর্ষায় প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে। বিভিন্ন দেশে এই ফুল বিভিন্ন সময়ে ফুটলেও বাংলাদেশে ফুটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। এই পুরো সময়েই কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে উজ্জ্বল লাল আভায়। তপ্তরাজ্যে এমন উজ্জ্বল লাল রং সত্যিই দুর্লভ বলেই হয়তো সবাই মেতে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার বন্দনায়। অন্যান্য সময়ে এ বৃক্ষের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়ে না। অনেকটা আড়ালেই থেকে যায় তখন। এপ্রিলে গ্রীষ্মের শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সবুজ পাতার মাঝে বেরিয়ে আসতে থাকে লাল রঙের কৃষ্ণচূড়া ফুল। মানুষের দৃষ্টিগোচর হতে থাকে তার সৌন্দর্য। তখন আর আলাদা করে তার খোঁজ নেওয়ার দরকার হয় না। দূর থেকে দেখে মনে হয়-সবুজের বুকে হয়তো আগুন লেগেছে।

স্থানীয়রা জানান, এই কৃষ্ণচূড়া ফুল লাল ও হলুদ রঙয়ের হয়ে থাকে। আমরা না জেনে একে কৃষ্ণচূড়া বলে থাকি। লাল রঙয়ের ফুলকে কৃষ্ণচূড়া ও হলুদ রঙয়ের ফুলকে রাধাচূড়া বলা হয়। তবে হলুদ রঙের রাধাচূড়া এখন তেমন দেখা যায় না বলেই চলে। আমাদের দেশে এপ্রিল মে মাসে এই ফুল ফোটে। বছরের অনান্য সময় এই ফুল বা গাছ সচরাচর চোখে না পড়লেও এপ্রিল মে মাসে যখনি গাছে নতুন পাতা বা ফুল ফোটা শুরু করে তখনি যেন পথচারির নজর কাড়ে মনোমুগ্ধকর এই কৃষ্ণচূড়া।

উপজেলার সচেতন মহলের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে উপজেলার আনাচে-কানাচে কৃষ্ণচুড়া ফুল গাছ। ভবিষ্যতে এ গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীরা। তারা আরও বলেন, প্রকৃতিতে এখন মনোমুগ্ধকর রঙ ছড়িয়েছে কৃষ্ণচূড়া। তাড়াইল উপজেলায় একসময় প্রচুর পরিমাণে কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যেত। গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলত। কালের পরিক্রমায় আবাসন ব্যবস্থার কারণে অনেক গাছ কাটা পড়েছে। সৌন্দর্য উপভোগ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ অভিযান চালাতে হবে।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty