মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ পূর্বাহ্ন

নেই বৈধ লাইসেন্স, তবুও চলেছে হেরিটেজ টোব্যাকো

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৪ Time View

প্রতিনিধি, কটিয়াদী, মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক : স্কুলের পাশেই সিগারেট তৈরির কারখানা। কারখানার বর্জ্যরে নর্দমা গিয়ে মিশছে নদীতে। অথচ তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্রসহ ১৯টি লাইসেন্স প্রয়োজন।

এসবের পরোয়া না করে বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই সিগারেট তৈরি করতো হেরিটেজ টোব্যাকো। কুলিয়ারচরে সরকারের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সিগারেটের কারখানা চালাতো ওই প্রতিষ্ঠান। কারখানার কারণে স্থানীয় পরিবেশও ছিল ঝুঁকিতে।

অভিযোগ উঠেছে প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই কারখানা পরিচালনা করতো হেরিটেজ টোব্যাকো।

অভিযানে মিলেছে নকল সিগারেট। স¤প্রতি অবৈধ সিগারেট তৈরি ও বাজারজাত করার অভিযোগে হেরিটেজ টোব্যাকোর ওই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে যৌথবাহিনী। অভিযানে অবৈধ সিগারেট উৎপাদনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ছাড়া নকল সন্দেহে ১ লাখ ৬০ হাজার শলাকা সিগারেট, ১১ লাখ ৭২ হাজার অবৈধ ট্যাক্স স্ট্যাম্প ও ৭ হাজার কেজি সেলুলোজ অ্যাসিটেট (সিগারেটের ফিল্টারে ব্যবহার করা দ্রব্য) জব্দ করা হয়।

একটি সিগারেট কারখানা উৎপাদনে যেতে হলে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, কলকারখানা অধিদপ্তরের অনুমোদনসহ ১৯টি লাইসেন্স লাগে। যেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্সে বলা আছে বয়লার স্থাপন করলে লাইসেন্স বাতিল হবে সেখানে এসক উপেক্ষা করে নকল ও অবৈধ সিগারেট উৎপাদন করতো প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া কারখানায় ছিল অনুমোদনহীন ‘টোব্যাকো প্রসেসিং প্ল্যান্ট।’ এ ধরনের প্ল্যান্ট তৈরি করতে কলকারখানা কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন। এছাড়াও কারখানার বর্জ্য যায় পাশের নর্দমায়। যা ঘোড়াউত্রা নদীতে মিশছে।

এতে ওই নদীতে দ‚ষণ ছড়িয়ে পড়ছে। কাগজপত্র নেই! হেরিজেট টোব্যাকো ওই কারখানায় বয়লার মেশিন ও টোব্যাকো প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। অভিযোগ উঠেছে বিষয়গুলো পরিবেশ অধিদপ্তর জানার পরও তারা প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা বা কোনো প্রকার আইনি ব্যবস্থা নেননি।

কারখানায় যে কক্ষে সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা বসেন সেই কক্ষের আলমারিতে প্রায় ২০ কোটি টাকার অবৈধ ব্র্যান্ডরোল ও নকল ট্যক্স স্ট্যাম্প পাওয়া যায়। এসব ব্র্যান্ডরোল ও ট্যক্স স্ট্যাম্পগুলো প্রিমিয়াম সেগমেন্টের। যা এই কারখানায় উৎপাদন করার কোনো অনুমতি নেই।

তবে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, এগুলো আসল নাকি অবৈধ সেগুলো এখনই বলা যাচ্ছে না। এ সময় তারা জব্দ করা ব্র্যান্ডরোল ও ট্যাক্সস্ট্যা ম্পগুলোর যাচাই-বাছাই কারা জন্য একাধিক নমুনা নিয়ে যায়। স্কুলের পাশেই কারখানা!

বিশেষভাবে সংরক্ষিত এই এলাকাটিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। সিগারেট উৎপাদনের সময় কাঁচামালের গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো কারখানার আশেপাশে। কারখানার পাশেই রয়েছে বেগম নূরুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। দুর্গন্ধ নিয়ে ভোগান্তিতে ছিল স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বেগম ন‚রুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, স্কুল চলাকালীন সময়ে তামাকের তীব্র গন্ধে স্কুলে টিকে থাকা অনেক কষ্টকর।

হেরিটেজ টোব্যাকোকে ২০১৯ সালে পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য সিলগালা করা হয়েছিল। তখন কারখানায় কোনো ধরনের বয়লার বা কোনো ধরণের বিশেষ যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে পারবে না বলে জানানো হয়। তারপরও প্রতিষ্ঠানটি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মেশিন স্থাপন করে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মতিন মুঠোফোনে বলেন, আমাদের সাথে তাদের যোগসাজশ আছে এটি সঠিক নয়। কিছুদিন আগে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তখন কিছু অসংগতি ছিলো। কি কি অসংগতি ছিলো জানতে চাইলে সহকারী এ পরিচালক বলেন, ফাইল দেখে বলা যাবে। ওখানে বয়লার স্থাপনের সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করা হবে আরে।

স্থানীয় স‚ত্রে জানা যায়, হেরিটেজ টোব্যাকোর মালিক রফিকুল ইসলাম। কিন্তু রফিকুল ইসলাম এই কারখানার মালিকানার কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এই কারখানার মালিক না। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই।

কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন পিপিএম বলেন, আমি এসে যোগদানের পর বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি সম্পর্কে আরো খোঁজ নিয়ে দেখবো।

স্থানীয়রা জানান, কারখানার মালিক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে চট্টগ্রামের সাবেক প্যানেল মেয়র ও ব্যবসায়ী আবদুস সবুর লিটনের সঙ্গেও যোগাযোগ আছে।

বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর মাধ্যমে বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির নকল সিগারেট তৈরি এবং নকল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ আছে আবদুস সবুর লিটনের নামে। স¤প্রতি ৫ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট ও সম্প‚রক শুল্ক ফাঁকি বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজিয়া খান বলেন, আমি জেলায় নতুন যোগদান করায় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আইনের বাহিরে কিছু পেলে শীঘ্রই ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty