মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ পূর্বাহ্ন

ঈশ্বরগঞ্জের দশ গ্রামের মানুষ স্বপ্ন দেখে শিম চাষ নিয়ে

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৫ Time View

প্রতিনিধি, ঈশ^রগঞ্জ, (ময়মনসিংহ) নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার : ঈশ^রগঞ্জের চরাঞ্চালের ১০ গ্রামের মানুষের স্বপ্ন এখন শিম চাষ নিয়ে। পরিবারের প্রতিটি সদস্য শিম চাষের মাঝে সময় দিচ্ছে বর্তমান সময়ে। বছরের এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকে চরাঞ্চলের কৃষকরা। ব্রহ্মপুত্র নদ উপক‚লবর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের দশ গ্রামের মানুষ শিম চাষ করে এখন স্বাবলম্বী।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ বিধৌত বেলে দোআঁশ মাটি সমৃদ্ধ উজানচর নওপাড়া, ভাটিচর নওপাড়া, চরশ্রীরামপুর, নামাপাড়া, কান্দাপাড়া, দিঘলাপাড়া, ময়দানপাড়া, মাচুয়াডাঙ্গা, যাদুয়ারচর, কোটেরচর গ্রামের প্রতিটি পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই এখন শিম চাষ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। এই এলাকার কৃষকদের মাঝে শিম হলো তাদের প্রধান অর্থকরী ফসল।

উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান শুভ চরাঞ্চলের শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন কৃষকের তথ্য দিয়েছেন। সে তথ্য অনুযায়ী সরেজমিন ভাটিরচর নওপাড়া গ্রামে গিয়ে কৃষক মোস্তফার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ২০২৩ সালে ৩৩ শতক জমিতে বারি-১ জাতের শিম চাষ করেন। শিম চাষ বাবদ তার খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। নভেম্বর হতে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে তিনি মোট ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদে তার লাভ হয় এক লক্ষ ৯০ হাজার টাকা।

কৃষক মোস্তফা জানান, শিমই আমাদের প্রধান ফসল। শিম চাষ করেই আমাদের সারা বছরের অর্থ উপার্জন হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, শিম চাষের অর্থে তিনি একটি সুন্দর বাড়ি করেছেন। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। এক ভাইকে বিদেশও পাঠিয়েছেন এই শিম চাষের টাকায়। এবার তিনি ২শ ৫০ শতক অর্থাৎ (২৫ কাঠা) জমিতে উফশী বারি-১ জাতের শিম চাষ করেছেন।

এতে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। খেত গুলো এখন ফুল ফলে সেজে উঠছে। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শিম তুলে বাজারজাত করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। বাজারদর ও আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এবার তিনি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

একই গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ জানান, শিম চাষ করে ভাগ্য বদল করছেন প্রান্তিক চাষী শরিফ মিয়া, ইমরান হোসেন ও সাইফুল ইসলাম।

কৃষক মেহেদী হাসান জানান, চরাঞ্চলের ১০ থেকে ১৫ টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক পরিবার এই শিম চাষের সাথে সম্পৃক্ত। মাঠে বীজ রোপন থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নারী পুরুষ মিলে খেতের পরিচর্যা করে থাকেন।

কৃষক হাসান মিয়া জানান, যে দিকে চোখ যায়, সেদিকেই দেখা যায় শিমের সমারোহ। এই শিম ক্ষেতে একসময় বিষ প্রয়োগ করে পোকামাকড় দমন করা হতো। এখন আর বিষ প্রয়োগ করতে হয় না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সকল কৃষক এখন সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করে থাকেন।

এ অঞ্চলের বিষমুক্ত শিমের সুনাম রয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে খেত থেকেই শিম কিনে নিয়ে যায়। এছাড়াও কৃষকরা স্থানীয়ভাবে জিগাতলায় এক শিম বাজার বসিয়েছেন। বাজারটি জিগাতলা জামে মসজিদের নিয়ন্ত্রণে সকাল ছয়টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত চলে।

এ বাজারে প্রতি কৃষক এক হাজার থেকে ৫০হাজার বা তার বেশি টাকার শিম বিক্রি করলেও মসজিদকে মাত্র দশ টাকা খাজনা দিতে হয়। এতে কৃষকরা খাজনার হয়রানি থেকে মুক্ত। এ বাজার থেকে ট্রাক, পিকআপ ভরে পাইকাররা ঢাকা চট্টগ্রাম সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিম রপ্তানি করে থাকেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান শুভ বলেন, কৃষকরা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার ও জৈব সার প্রয়োগ করে সেই শিম উৎপাদন করে থাকেন। ফলে শিম গুলো হয় স্বাস্থ্যবান ও সুস্বাদু। বিষ মুক্ত শিমের চাহিদা বেশি হওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শিম নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় না। পাইকাররা অগ্রিম বায়নাও করে থাকেন কৃষকদের সাথে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান জানান, চলতি মৌসুমে শিম চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিল ৪শ হেক্টর। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে আবাদ হয়েছে প্রায় ৫শ হেক্টর। আমরা মাঠ পর্যায়ে ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় কিছু কৃষককে শিম চাষের প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেছি। উচ্চ মূল্যের এই ফসলের ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন উদ্যোক্তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিম চাষ এখন চরাঞ্চলের মানুষের কাছে সোনার ফসলে পরিণত হয়েছে।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty