কটিয়াদী প্রতিনিধি, এম এ কুদ্দুছ : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর সদরের কামারকোনা গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কটিয়াদী উপজেলায় মাচা পদ্ধতিতে বেড়েছে লাউয়ের আবাদ। লাউ শীতকালীন সবজি হলেও সারা বছরই লাউয়ের আবাদ করছেন উপজেলার চাষিরা। মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ করায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। কীটনাশক প্রয়োগ না করে লাউয়ের আবাদ করায় এই উপজেলার উৎপাদিত লাউয়ের চাহিদা এখন দেশজুড়ে। কৃষক আফাজ উদ্দিনের সাফল্যে আরও অনেকেই উৎসাহিত হয়ে লাউ চাষ করছেন। যা দেখে কটিয়াদী উপজেলায় বাড়ছে লাউয়ের চাষাবাদ।
অল্প খরচে বেশি মুনাফা হওয়ায় লাউ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্ট কৃষি অধিদপ্তরের। তিনি প্রতি বছরের মতো এবারো কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ১৪ শতক জমিতে লাউয়ের চারা রোপণ করেন। নিজের পৈতৃক জমিতে ডায়না ও জিরান জাতের লাউয়ের চারা রোপণ করেছেন। তার ১৪ শতক জমিতে লাউ ধরা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রয় করেছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, লাউ চাষে গোবর, ছাই, কচুরিপানা আর পানিই প্রধান। এসবের বাইরে রাসায়নিক সারের খুব একটা ভূমিকা নেই বললেই চলে। তাই এক বিঘা জমিতে লাউ চাষে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। অন্য ফসলের তুলনায় লাউ চাষে শ্রমও তুলনামূলক কম দিতে হয়। শীতকালীন সবজি হিসেবে ভোক্তাদের কাছে লাউয়ের প্রচুর চাহিদা এবং বাজার দর ভালো থাকায় প্রতি বিঘা জমির লাউ এক লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। এ ছাড়া লাউয়ের ডগা বিক্রি করে আসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
তুলনামূলক শ্রম ও ব্যয় কম হওয়ায় মাচা পদ্ধতিতে বেশ জনপ্রিয়। বেশি ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি লাউ চাষিরা। লাউসহ নতুন নতুন সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ। লাউ চাষি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন- পাটের আবাদে যে টাকা খরচ করেছিলাম তার অর্ধেক টাকাও ঘরে তুলতে পারিনি। ধানের আবাদেও সার, বিষ ও সেচ খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এ বছর দুই বিঘা জমিতে মাচা পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের লাউয়ের আবাদ করেছি। লাউ আবাদে সেচ ও শ্রমিক খরচ কম। পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন নেই। ফলে কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় মানুষ বিষমুক্ত সবজি পাচ্ছে ।
ফেকামারা গ্রামের লাউচাষি সফদার আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে মাচা পদ্ধতিতে মার্টিনা জাতের লাউয়ের আবাদে খরচ পড়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। লাউয়ের উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। দামও মোটামোটি ভাল। আমি এক বিঘা জমিতে লম্বা হাইব্রিড জাতের ও এক বিঘায় গোলাকার দেশীয় জাতের লাউয়ের চাষ করেছি। লম্বা জাতের লাউয়ের চাহিদা একটু কম। গোলাকার দেশীয় জাতের লাউয়ের চাহিদা অনেক ভালো। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার ব্যবসায়ীরা আমাদের জমি থেকে লাউ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করি লাভবান হব ।
লোহাজুড়ি, জালালপুর, মসূয়া, চর ঝাকালিয়াসহ বেশ কিছু মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, উর্বর ফসলি জমিতে পরিকল্পিতভাবে কৃষক মাচায় লাউ চাষ করেছেন। উন্নত জাতের লাউ চাষ করায় প্রতিটি মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে আছে লাউ। বর্তমানে বাজারে একটি লাউ প্রকার ভেদে ৩০ টাকা হতে ৬০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দাম ভালো পেয়ে খুশি কৃষক। কটিয়াদী নদীর বাধ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, প্রতিদিনই কৃষকরা আমাদের আড়তে লাউ বিক্রি করছেন। আবার অনেকেই পাইকারি কিনে ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম সহ দেশের বড়বড় শহরে বিক্রি করে। আমাদের উপজেলার উৎপাদিত লাউ দেখতে অনেক সুন্দর মসৃণ ও সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা ভালো । একদিকে কৃষকরা যেমন উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন তেমনি বিক্রি করেও আমরা লাভবান হচ্ছি । তাছাড়া যে সকল এলাকায় সবজি আবাদ হয় না সে এলাকার মানুষের সবজির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ভূঞা জানান, লাউ সাধারণত শীতকালীন সবজি হলেও, বর্তমানে শীতের আগে আগাম সবজি হিসেবে লাউ চাষের কদর বেড়েছে। লাউয়ের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে তার মধ্যে ডায়না,জিরান ,মার্টিনা, শীতালাউ ও মার্শাল সুপার জাতের লাউ আবাদ হয়ে থাকে। আমরা কৃষকদের মাঠ দিবসের মাধ্যমে মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষের পরামর্শ দিলে কৃষকরা বর্ষার শেষ এবং শীতের শুরুতে কয়েকবছর মাচা পদ্ধতিতে লাউয়ের আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পৌরসভা বøক মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, এলাকার কৃষকরা আগাম লাউ চাষ করে বেশ লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সবজির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।