প্রতিনিধি পাকুন্দিয়া, মুহিব্বুল্লাহ বচ্চন : রাস্তার পাশেই এক বিঘা জমিতে চার দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত একটি বাড়ি। বাড়িটিতে থাকেন পল্লী চিকিৎসক বোরহান উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী সারাবান তাহুরা দম্পতি।
বাড়িটির প্রতিটি জায়গা সাজিয়েছেন নানা রকম পরিকল্পনা দিয়ে। শাক-সবজি থেকে শুরু করে গরু-ছাগল, ভেড়া, হাস-মুরগী, কবুতর এমনকি বসতঘরের ছাদে তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন ছাদ বাগান। নিজেদের অবসর সময়টুকু কাজে লাগিয়ে অনেকটা শখের বসেই গড়ে তুলেছেন এই ছাদ বাগান। প্রায় ২ হাজার স্কয়ার ফিট ছাদ বাগানটিতে রয়েছে লেবু, ড্রাগন, আদা, কাচামরিচ, অ্যালোভেরা সহ ভেষজ ও ঔষধি গাছ এবং নানা রকমের ফুল ও ফলের গাছ।
পাকুন্দিয়া উপজেলার পৌরসদরের মধ্য পাকুন্দিয়া গ্রামের পাকুন্দিয়া-হর্ষি সড়কের পাশেই এই দম্পতির বাড়ি।
সরেজমিনে বাড়িটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, মেইন গেইট দিয়ে ঢুকতেই ডানপাশে ছোট্ট একটি দেশীয় জাতের মুরগীর খামার। যে খামারে রয়েছে শতাধিক মুরগী। বাম পাশে রয়েছে ৮/১০টি ছাগল এবং ভেড়া। একটু সামনে এগুলেই একপাশে রয়েছে ৪টি গাভী। আরেকপাশে রয়েছে প্রায় ২৫ জোড়া কবুতর।
রয়েছে একটি পাকা বসতঘর। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতেই চোখে পরলো সারি সারি ড্রাগন গাছ। গাছগুলোতে আবার বাশের মাচা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাদের এক পাশেই অর্ধশত বস্তায় রয়েছে আদা চাষ। এছাড়াও রয়েছে কাচা মরিচ, অ্যালোভেরা, লেবু ও বিভিন্ন ভেষজ গাছ এবং ফুল ও ফলের সারি সারি গাছের সমাহার। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে এগুলোর পরিচর্যা করছেন।
জানা যায়, বোরহান উদ্দিন একজন পল্লী চিকিৎসক, উপজেলার তারাকান্দি বাজারে তাঁর একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। পাশাপাশি তিনি একজন কবি। তাঁর লেখা কবিতা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী সারাবান তাহুরা যুব উন্নয়নের সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে সেলাই কাজ করেন এবং শিক্ষা দেন। তাদের সংসারে দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে।
বড় ছেলে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে হবিগঞ্জে একটি বেসরকারি ফার্মে চাকুরি করেন। ছোট ছেলে নারায়গঞ্জে মেরিন একাডেমিতে পড়াশোনা শেষ করে গাজীপুরে কর্মরত আছেন। দুই ছেলেই কর্মস্থলে স্ত্রীসহ বসবাস করেন। সেই সুবাদে বোরহান উদ্দিন দম্পত্তিই শুধু বাড়িতে থাকেন। নিজেদের কর্ম ব্যস্ততার পাশাপাশি বাকি সময়টুকু ব্যয় করেন ছাদ বাগানসহ গরু, ছাগল, হাস-মুরগীর পেছনে।
বোরহান উদ্দিন জানান, নিজেদের সব সময় ব্যস্ত রাখার পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল করে রাখতেই ম‚লত তাদের এই পরিকল্পনা। সেই সাথে ছাদ বাগানে গাছের পরিচর্যা করতে এবং হাস, মুরগি, গরু ছাগল লালন-পালন করতে তাদের খুব ভাল লাগে। তিনি আরও জানান, ছাদ বাগান থেকে এ বছর ২ মণ ড্রাগন ফল পেয়েছেন। কয়েকদিন পর আদা উত্তোলন করবেন যা থেকে ২ মণ আদা পাওয়ার আশা করছেন।
এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম জানান, কৃষক বোরহান উদ্দিন একজন ভাল কৃষক, দীর্ঘদিন যাবত বø্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল লালন পালনসহ প্রাণিসম্পদ লালন পালনে অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ। তিনি তার বসত বাড়ির প্রতিটি অংশ কৃষি এবং প্রাণিসম্পদের চমৎকার সমাহার ঘটিয়েছেন।
ড্রাগন ফল চাষ, বস্তায় আদা চাষ, ঔষধি গাছের বাগানসহ বিভিন্ন ফল বাগান রয়েছে তার বসতবাড়িতে। তার বসতবাড়ির বাগান দেখে আশেপাশে কৃষকরাও এরুপ বাগানে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি একজন কবি ও বটে। বিভিন্ন কাব্য পাঠের আসরে তার কবিতা শ্রোতাদেরকে মুগ্ধ বিমুগ্ধ করে।