এফএনএস : কল্পনা করুন তো, আকাশপথে নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন যেতে যেখানে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে, সেখানে মাত্র এক ঘণ্টায় কীভাবে ভ্রমণ করা সম্ভব? ১৫ ট্রিলিয়ন পাউন্ডের প্রস্তাবিত ট্রান্স-আটলান্টিক টানেল সেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে।
এই টানেল দিয়ে ভ্যাকুয়াম টিউব প্রযুক্তির ট্রেন ঘণ্টায় ৩ হাজার মাইল গতিতে মাত্র ৫৪ মিনিটে নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন পৌঁছে দেবে যাত্রীদের। নিউইয়র্ক এবং লন্ডনকে সংযুক্তকারী উচ্চাভিলাষী ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক টানেল নির্মাণের প্রস্তাবটি অনেক আগের। স¤প্রতি অনলাইনে সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মেট্রোর মতে, এটি একটি লোভনীয় ধারণা, তবে খরচ অত্যন্ত বেশি। ৩ হাজার ৪০০ মাইল টানেলের আনুমানিক খরচ ১৫ ট্রিলিয়ন পাউন্ড বা ১৯.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পের জটিলতা এবং আকারের কারণে এটি কয়েক দশক সময় নেবে।
এর আগে ইংলিশ চ্যানেলের সমুদ্র তলদেশ দিয়ে ২৩.৫ মাইলের পথে নির্মিত চ্যানেল টানেল যুক্তরাজ্যের ফোকস্টোন ও ফ্রান্সের কোকুয়েলসকে যুক্ত করেছে। সেটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল ছয় বছর। সেই তুলনায় ট্রান্স-আটলান্টিক টানেল তৈরি করতে অনেক বেশি সময় লাগবে। মেট্রোর মতে, ভ্যাকুয়াম টিউব টেকনোলজি এবং চাপযুক্ত যানবাহন থেকে শুরু করে প্রযুক্তির সা¤প্রতিক উন্নয়ন এটা বাস্তবে পরিণত করতে পারে।
প্রস্তাবিত ট্রেনগুলো চাপযুক্ত টানেলের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করবে, যেখানে বাতাসের প্রতিরোধ ছাড়াই ঘণ্টায় ৩ হাজার মাইল গতিতে পৌঁছতে পারবে। যদি এই প্রকল্পের ধারণাগুলো শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যায়, তাহলে এটি হবে লন্ডনবাসীরা নিউইয়র্কের ট্রেনে চড়ে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে পুকুর পার হওয়ার মতো। মেট্রো জানায়, এটি পরিবেশগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ হতে পারে এবং বিমান ভ্রমণের দ্বারা সৃষ্ট ভারী বায়ুদূষণ হ্রাস করতে পারে।
প্রযুক্তিটি সুপারলুপ ট্রেনের মতো, যা সুইস প্রকৌশলীরা পরীক্ষা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে ‘ভ্রমণের ভবিষ্যত’ পরিবর্তন করতে পারে। কিছু প্রকৌশলী প্রস্তাবিত ট্রান্স -আটলান্টিক টানেলটি পুরু সমুদ্রের তলদেশে নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছেন, অন্যরা বিশ্বাস করেন যে এটিকে কেবল বা স্টিল্ট দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ভালো হবে। চ্যানেল টানেল ভ‚পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২৪৫ ফুট নীচে পৌঁছেছে, তবে প্রস্তাবিত ট্রান্স-আটলান্টিক টানেলটি আরও গভীরে যেতে পারে। আন্ডারওয়াটার টানেলের ধারণা উনিশ শতকে আবির্ভূত হয়েছিল।
১৮০২ সালে ফরাসি খনির প্রকৌশলী আলবার্ট ম্যাথিউ-ফ্যাভিয়ার ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে একটি টানেলের জন্য একটি ধারণা প্রস্তাব করেছিলেন, যা তেলের বাতি দ্বারা আলোকিত হয়। ট্রান্স-আটলান্টিক টানেল নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন প্রযুক্তির ধারণা দেন। তবে এর স্কেল, খরচ এবং ব্যবহারিক উপযোগ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের কারণে অগ্রগতি হয়নি। তবে ভ্যাকুয়াম টিউব প্রযুক্তির সা¤প্রতিক অগ্রগতি ট্রান্স-আটলান্টিক টানেল ধারণার সম্ভাব্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
ভ্যাকুয়াম-চালিত ট্রেনের ধারণাটি ইলন মাস্ক দ্বারা জনপ্রিয় হয়েছিল। তিনি ২০১৩ সালে বায়ু প্রতিরোধ কমাতে, দক্ষতা এবং গতি বাড়াতে ভ্যাকুয়াম পরিবেশের ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। তারপর থেকে হাইপারলুপ প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য মনোযোগ অর্জন করেছে। ভারত এবং চীনের মতো দেশে এটা নিয়ে ট্রায়াল চলছে। এটিকে জাতীয় উচ্চ গতির রেল নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।