পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি, মুহিবুল্লাহ বচ্চন : লাকী আক্তার (২৫) একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু একটা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠেনি, অল্প বয়সেই বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাকে। অভাব অনটনের সংসারে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই চাকরি নেন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে।
সাত বছর পর নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন। ছোট্ট পরিসরে একটি ক্ষুদ্র কুটির শিল্প গড়ে তোলেন তিনি। চার বছরের মাথায় পেয়েছেন ঈর্ষনীয় সাফল্য। নিজেকে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। এখন প্রতি মাসেই তিনি আয় করছেন লাখ টাকা।
লাকী আক্তার পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামের রুকুন উদ্দিনের মেয়ে। পৌরসদরের চর পাকুন্দিয়া সেরাবাড়ি মোড়ে একটি ভাড়া বাসায় ‘লাকী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প’ নামে একটি কারখানা রয়েছে তার। সেখানেই তিনি তার স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।
২ ভাই ৪ বোনের মধ্যে লাকী আক্তার ৪র্থ। পড়াশোনা করেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। স্কুলের ক্লাসেও ভাল ছাত্রী ছিলেন। অভাব-অনটনের সংসারে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে ঢাকার গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। নিজের দক্ষতা প্রমাণ করে মাত্র তিন মাসের মাথায় সুপারভাইজার পদে পদোন্নতি পান।
সাত বছর একই কোম্পানিতে চাকরি করেন। একসাথে চাকরি করাকালীন পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১৬ সালে আব্দুল কাদের নামে সহকর্মীকে তিনি বিয়ে করেন। তাদের সংসারে ৫ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের এলাকায় ফিরে আসেন। পৌর সদরে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
প্রথমে ১ টি সেলাই মেশিন দিয়ে চটের তৈরি বিভিন্ন ব্যাগ, ত্রিপল ইত্যাদি বানানোর কাজ শুরু করেন। প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করেন। এক বছরের মাথায় আরও ২টি আধুনিক সেলাই মেশিন যোগ করেন তার ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে। টাকার অভাবে ব্যবসা থমকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, কি করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না।
বিষয়টি পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেনের নজরে আসলে তিনি তাকে একটি ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করে দেন। আস্তে আস্তে ব্যবসা বড় হতে থাকে, বর্তমানে ১০টি আধুনিক মেশিন রয়েছে তার কারখানায়। এছাড়াও ১৪ জন নারী-পুরুষ কাজ করছে তার সাথে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর রাস্তার পাশেই একটি টিন সেড ঘরে লোকজন নিয়ে কাজ করছে লাকী আক্তার। সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ সুতা কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, আবার কেউ কেউ প্যাকেটিংয়ের কাজ করছেন, তার স্বামীও তার কাজে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। মালামাল সরবরাহ এবং বিক্রয়ের কাজের দেখভাল করেন তার স্বামী।
দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠের প্রতিনিধির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে লাকী আক্তার জানান, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু করার। অল্প বয়সেই বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল, স্ক্লু জীবন থেকেই আমি ভাল ছাত্রী ছিলাম, পড়াশোনার পাশাপাশি যে কোন দায়িত্ব পালনে সিরিয়াস ছিলাম। কর্মক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম করিনি। অল্পদিনেই সবার মন জয় করতে পেরেছি। সবসময় ভাবতাম নিজে কিছু একটা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার।
আসলে ইচ্ছে থাকলে সবই সম্ভব। দীর্ঘদিন পর আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। একজন গার্মেন্টস কর্মী থেকে সফল নারী উদ্যোক্তা হওয়া আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি। আমার সফলতার পেছনে পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রশাসন বিভিনভাবে সহযোগিতা করেছেন। আর এজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন জানান, লাকী আক্তার একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তার আগ্রহ তাকে এতদ‚র নিয়ে গেছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের বাংলাদেশে নারীরা এখনো পিছিয়ে রয়েছে। বিভিন্নভাবে তারা নির্যাতিত হচ্ছে। সমাজে তারা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। একমাত্র আত্মনির্ভরশীলতাই নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে।