আজ আমরা যে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছি, সিনেমা-নাটক বা হালের ওয়েস সিরিজ বানাচ্ছি তা একদিনে সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন ব্যক্তির নিরলস শ্রম-মেধায় কালক্রমে তা শানিত হয়েছে। ক্যামেরা-ছবি ও সিনেমার সেই পথ পরিক্রমা নিয়ে আমাদের এই ধারাাহিক আয়োজন। আজ থাকছে ২য়-পর্ব…
ডেগুরি’কে নিয়ে অবস্কিউরা ক্যামেরার উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে নিপেস ‘ডেগুয়ারোটাইপ’ নামে অভিহিত করেছিলেন। নিপেসের মৃত্যুর পর সঙ্গী লুইস ডাগুয়েরে পরীক্ষা চালিয়ে যান এবং ১৮৩৭ সালের মধ্যে প্রথম ব্যবহারিক ফটোগ্রাফিক প্রক্রিয়া ‘ডাগুয়েরোটাইপ’ তৈরি করেন এবং ১৮৩৯ সালে সর্বজনীনভাবে উন্মোচন করেন। ডাগুয়েরে তামার একটি সিলভার-প্লেটেড শীটকে আয়োডিন বাষ্প দিয়ে নিরিক্ষা করেছিলেন, যাতে এটি হালকা-সংবেদনশীল সিলভার আয়োডাইডের আবরণ দেয়। ক্যামেরায় এক্সপোজারের পর চিত্রটি পারদ বাষ্প দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল এবং সাধারণ লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) এর একটি শক্তিশালী দ্রবণ দিয়ে স্থির করা হয়েছিল। হেনরি ফক্স ট্যালবট ১৮৪০ সালে একটি ভিন্ন প্রক্রিয়ায় ক্যালোটাইপকে নিখুঁত করেছিলেন। বিজ্ঞানী এবং রাজনীতিবিদ ফ্রাঁসোয়া আরাগোর সহায়তায় ফরাসি সরকার জনসাধারণের জন্য ‘ডেগুয়ারোটাইপ’ অধিগ্রহণ করে। বিনিময়ে ডাগুয়েরের পাশাপাশি নিপেসের ছেলে ইসিডোরে’কে পেনশন প্রদান করা হয়েছিল। ১৮৩০-এর দশকে ইংরেজ বিজ্ঞানী উইলিয়াম হেনরি ফক্স ট্যালবট স্বাধীনভাবে সিলভার সল্ট ব্যবহার করে ক্যামেরার ছবি তোলার জন্য একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। দুই বছরের মধ্যে ফক্স ট্যালবট কাগজে ফটোগ্রাফ তৈরি করার জন্য একটি প্রয়াস চালান। যাকে তিনি ক্যালোটাইপ নামে অভিহিত করেন। ক্যালোটাইপ প্রক্রিয়াটি শুরুতে নেতিবাচক মুদ্রণ ব্যবহার করে, যা প্রজনন প্রক্রিয়ায় সমস্ত মানকে বিপরীত করে কালোকে সাদা হিসাবে এবং বিপরীতভাবে দেখায় মূল নেবেটিভ থেকে। রিচার্ড লিচ ম্যাডক্স ১৮৭১ সালে গুণমান এবং গতিতে প্রতিদ্ব›দ্বী জেলটিন ড্রাই প্লেট আবিষ্কার করেন। তবে Desire van Monckhoven এর কাজের জন্য ১৮৫৭ সাল থেকে কোলোডিয়ান ড্রাই প্লেট পাওয়া যাচ্ছিল। ১৮৭৮ সালে আবিষ্কৃত জেলটিন ইমালসন এর সংবেদনশীলতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে তথাকথিত ‘তাৎক্ষণিক” স্ন্যাপশট এক্সপোজারগুলিকে বাস্তব সম্মত করে তোলে। আলফোনস গিরোক্স নামে এক ফরাসি ভ্রদ্রলোক ক্যামেরা তৈরির জন্য ডাগুয়ের এবং ইসিডোর নিপসের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির ভিত্তিতে ১৮৩৯ সালে তিনি বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করেন প্রথম ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা যা ছিল একটি ড্যাগুয়েরোটাইপ ক্যামেরা। Giroux daguerreotype ক্যামেরা প্রবর্তনের পর বিপ্লব ঘটে এই শিল্পে। অন্যান্য নির্মাতারা দ্রত এর উন্নতি সাধন ও বৈচিত্র আনতে থাকেন। নিসেফর নিপসে’কে লেন্স সরবরাহকারী চার্লস শেভালিয়ার ১৮৪১ সালে ইমেজিংয়ের জন্য একটি অর্ধ-আকারের প্লেট ব্যবহার করে একটি ডাবল-বক্স ক্যামেরা তৈরি করেছিলেন। ১৮৪১ সালে মার্ক অ্যান্টোইন গাউডিন দ্বারা নির্মিত Nouvel Appareil Gaudin ক্যামেরায় একটি ধাতব ডিস্ক ছিল, যার লেন্সের সামনের দিকে তিনটি ভিন্ন আকারের ছিদ্র ছিল। পিটার ফ্রেডরিখ ভয়েল্টান্ডার শঙ্কু আকৃতির একটি অল-মেটাল ক্যামেরা ডিজাইন করেছিলেন যা প্রায় ৩ ইঞ্চি ব্যাসের বৃত্তাকার ছবি তৈরি করেছিল। Voigtlander ক্যামেরার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল জোসেফ পেটজভালের ডিজাইন করা একটি লেন্সের ব্যবহার। ১৮৮৯ সালে কার্ল জেইস অ্যানাস্টিগম্যাট লেন্স প্রবর্তন না করা পর্যন্ত এর নকশাটি প্রতিকৃতির জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছিল।